রমাদানে যে খাবার অল্প খেলেও ভরপেট থাকবেন

রমাদানের সারাদিন না খেয়ে থাকায় ইফতারের সময় আমরা নানান খাবারের আয়োজন করি। সেহেরিতে দীর্ঘ সময় নিয়ে খাই। কখনো কখনো এসব খাবারের পরিমাণ অন্য মাসের সময়ের চেয়েও বেশি হয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমরা অনেকেই রমাদানে প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করি। শারীরিক দুর্বলতার অজুহাতে কেউ কেউ অলসভাবেই কাটিয়ে দিই দিনের বড় একটি অংশ। ফলে না হয় আখিরাতের আমল, না দুনিয়ার আমল।

আসলে আমরা ভুলে যাই, সাওম পালনের জন্য আমাদের যে শক্তি দরকার, সেটা যোগান দেবার একমাত্র সময় হচ্ছে সেহরি এবং ইফতারের সময়টা। তাই আমাদের খাবারদাবারে শাকসবজি, বিভিন্ন শস্যদানা যত বেশি যোগ করতে পারব, তত বেশি আপনার শক্তির যোগান মিলবে। ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাবে। তাই সেহরি এবং ইফতারের খাবারে এরকম ৩-৪ টি খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন যা সারাদিন আপনার শরীরে শক্তি যোগান দেবে এবং পেট ভরপেট রাখবে।

ইফতার ও সেহরিতে যে খাবারগুলো খাবেন

সেহরিতে উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো আপনার সিয়াম পালনের পুরো দিন জুড়ে আপনাকে ভরপেট রাখবে।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে যেমন শস্যদানা (Whole grains), ওটমিল, মসুর ডাল, শাক সবজি, বাদাম, ফলমূল (আপেল, বেরি ইত্যাদি)।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: মাছ, মুরগী, ডিম, মটরশুঁটি, দই, কুটির পনির, ওটমিল, ডাল ইত্যাদি।

ইফতারে ফাইবার এবং উচ্চতর প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি হাইড্রেটিং খাবারগুলো আপনাকে ভরপেট রাখতে এবং খাদ্য উপাদানগুলোর সুষম বণ্টন করতে সহায়তা করবে।

হাইড্রেটিং খাবার: বিভিন্ন ধরণের স্যুপ, ফল (যেমন: তরমুজ), শাকসবজি ইত্যাদি।

আসলে একজন রোজাদার ইফতারে কী খাবেন, তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। তবে সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে খেজুর বা খোরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, বুট, ফরমালিন অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডলসও খেতে পারেন ইফতারে। তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে বদহজম হতে পারে।

শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না

কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। বেশি না খেয়ে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে। ইফতার ও সেহরিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন। গ্লাস গুনে পানি খেতে অসুবিধা হলে সমপরিমাণ পানি বোতলে ভরে রাখুন এবং ইফতার থেকে সাহ্‌রির সময়ের মধ্যে তার পুরোটা পান করুন। এনার্জি ড্রিংক, কার্বনেটেড ড্রিংক এবং সোডাজাতীয় পানীয় বর্জন করুন। এগুলো অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেয়। সারা দিন অভুক্ত থাকার ফলে শরীরের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় এবং দ্রুত শক্তি পাওয়া যায় এমন খাবারের উদাহরণ হলো গ্লুকোজ।

অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সেহরির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি খাবার খেতে হবে। তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার–পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

সবশেষে পেটে গ্যাস বা জ্বালাপোড়া নিয়ে রোজা শুরু করলে এমনিতেই আপনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন, এখন যত বেশি খান লাভ নেই। আবার অতিভোজনের ফলে সারাদিন বার বার টয়লেট যাওয়া আর ঘুম ধরার যন্ত্রণা তো আছেই। তাই রমাদানে স্বাস্থ্যকর খাবারের মূল মন্ত্র হলো, অতিরিক্ত তেল, চর্বি থেকে বিরত থাকুন এবং প্রাকৃতিক খাবারগুলো বেছে নিন। সেহরি ও ইফতারে পানি বেশি খান। যাতে ডিহাইড্রেশন থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *