রিজিকের ৭টি দরজা

১) সালাত বা নামাজ

যে রাস্তাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় রকমের রিজিক পৌঁছান, তার মধ্য থেকে এক নম্বর হলো নামাজ। নামাজের মাধ্যমে এবং নামাজের দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা রিজিক পৌঁছান।

“হে রাসুল, আপনি আপনার পরিবারদেরকে নামাজের আদেশ করুন, নিজেও অবিচল থাকুন; (নিজেও নামাজ পড়ুন, আর, নামাজের দাওয়াত দিন) আমি আপনার কাছে রিজিক চাই না; বরং আমিই আপনাকে রিজিক দিই।” (সূরা ত্বহা, ১৩২)

আমি আপনাকে রিজিক দেবো, আপনি মানুষকে নামাজের দাওয়ায় দিন, আপনি দাওয়াতের কাজ করুন, মেহনত করুন, নিজে আমল করুন আরেকজনকে আমলের দাওয়াত দিতে থাকুন, আমি আপনাকে রিজিক দেবে তার মানে, সালাতের দ্বারা রিজিক আসে। দু রাকাত সালাত আপনি পড়লেন, আল্লাহর কাছে চাইলেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে ওষুধ ছাড়াই সুস্থ করে দিলেন। এরকম রিজিক আসতে পারে।

২) তাকওয়া বা স্রষ্টানুভূতি

অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে ইসলামের বিধিবিধানকে শক্তভাবে মেনে চলা। হালাল-হারামগুলো বেছে চলা, আল্লাহকে হাজির-নাজির মনে করা যে, আল্লাহ আমার সামনে উপস্থিত, আমি কীভাবে গুনাহ করতে পারি। সূরা তলাকে বলা হয়েছে-

“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে ধারণাতীত রিজিক দান করেন, যার ব্যাপারে তার কোনো ধারণাও ছিল। না।” (সূরা তলাক, ২-৩)

তার কোনো কল্পনাও নেই যে, এখান থেকে তার রিজিক আসতে পারে; কিন্তু আল্লাহ তাআলা এমন সমস্ত জায়গা থেকেও রিজিক দেবেন।

৩) তাওয়াক্কুল

আল্লাহর ওপর ভরসা করা। অনুকূল হোক বা প্রতিকূল, বিপদে হোক, আনন্দে হোক—সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা, ভরসা করা, নির্ভর করা। পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা যে, আল্লাহ আপনিই করবেন; আমার কোনো শক্তি নেই, ক্ষমতা নেই; আপনিই করেন, আপনিই করবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যদি তোমরা সঠিকভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে, তবে তিনি তোমাদেরকে রিজিক দান করতেন, যেমন পাখিকে রিজিক দান করেন। তারা সকালে খালি পেটে বের হয়, পেট পূর্ণ করে রাতে ফিরে আসে।”(তিরমিজি, ২৩৪৪)

অর্থাৎ, পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। নিজের শক্তির ওপর ভরসা না করে, কোনো এমপি-মন্ত্রী-মিনিস্টারের তদবির-সুপারিশের ভরসা না করে, নিজের যোগ্যতার ওপর ভরসা না করে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার কুদরতের ওপর ভরসা করা যে, আল্লাহই করবেন। আল্লাহ তাআলা ‘কুন’ (হয়ে যাও) বলার দ্বারাই ‘ফাইয়াকুন’ (হয়ে যায়)। আল্লাহ চাইলেই হয়ে যায়। গভীরভাবে আল্লাহর ওপর নিজেকে ছেড়ে দেওয়া, তাওয়াক্কুল করা। এর মাধ্যমে রিজিক আসে; পাখির মতোন রিজিক আসে।

৪) ইসতিগফার

প্রতিদিন বেশিব এশি আল্লাহর কাছে তাওবা করা, ক্ষমা চাওয়া। এর মাধ্যমে রিজিক আসে। হাদীসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইসতিগফার করবে, আল্লাহ তাকে সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (হাকিম, ৭৬৭৭)

তাহলে, ইসতিগফারের মাধ্যমে রিজিক আসে। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না যে, কোত্থেকে আপনার রিজিক আসছে।

৫) কামাইয়ের চেষ্টা

যেটা আমরা করি এবং রিজিকের তালাশ বলতে শুধু এটাই বুঝি ও বোঝাই। কুরআনে এসেছে,

“অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো। আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো (অর্থাৎ, জিকিরের সাথে…), যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা, ১০)

৬) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

একটি হাদীসে এসেছে:

‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারী ৫৯৮৫)

অর্থাৎ, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর রাখা, সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাড়ানো, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, সম্পর্ক ঠিক রাখা। এর মাধ্যমে রিজিক প্রশস্ত হয়।

৭) বিবাহ করা

কুরআনে এসেছে :

“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও…. তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।….” (সূরা নূর, ৩২)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নারীদেরকে বিয়ে করো, নিশ্চয়ই তারা সম্পদ (অর্থাৎ সৌভাগ্য) নিয়ে আসে।” (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, ১৬১৬১) আরেক হাদিসে এসেছে, “বিবাহের দ্বারা রিজিক তালাশ করো।” (আল-মাকাসিদুল হাসানাহ, ১৬২) উমর রা. বলেন, “আমি ওই লোকের প্রতি আশ্চর্য হই, যে বিবাহের দ্বারা রিজিক খুঁজে নেয় … না….।” এরপর তিনি ওপরের আয়াতটি তেলাওয়াত করেন দলিল হিসেবে।

তার মানে বিয়ের মাধ্যমে রিজিক আসে। তাহলে দেখুন, রিজিকের জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ৭টি দোকান দিয়েছে; কিন্তু আমি দোকান খোলা রেখেছি শুধু একটি। কেবল ব্যবসা আর চাকরির দোকান। একটিমাত্র দোকান খোলা রেখে বলছি, ‘আল্লাহ, আমার অভাব দূর হয় না, আমার অভাব দূর করে দিন; আল্লাহ, আপনি আমার রিজিকে বরকত দান করুন, আমার রিজিক বাড়িয়ে দিন।’ বাকি ছয়টি দোকান বন্ধ রেখে আমি বলছি, আমার রিজিকের অভাব দূর হয় না!

ডা. শামসুল আরেফীন রচিত ‘মুমিনের ক্যারিয়ার ভাবনা‘ বই থেকে


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *