রমাদানে ফিটনেস ধরে রাখার ৩টি উপায়

রমাদানে আমাদেরকে দিনভর অত্যাধিক পরিমাণে হরেক রকমের কাজ করতে হয়। এসবের পাশাপাশি নফল ইবাদত করতে পারার এবং আল্লাহর রহমত হাসিল করার দারুণ সুযোগও আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। আর এ জন্যেই রমাদানে আমাদের উচিত আপন স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ রাখা।

আপনি যদি জীবনে কিছু অর্জন করতে চান বা কিছু করতে চান তাহলে তার পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে নিজের ফিটনেস ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে হেলামি করে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়লে কীভাবে আমরা রমাদান মাসে আমাদের উপর অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব ইহসান এবং প্রকৃষ্টতা দিয়ে করে যেতে পারব?

এই লেখায় আমরা এমন তিনটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করব যা রপ্ত করতে পারলে রামাদান মাসে আপনি আপনার সর্বোচ্চ প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সুস্বাস্থ্য মূল লক্ষ্য নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক ও পার্থিব সাফল্য হাসিল করতে সহায়ক একটি মাধ্যম মাত্র!

১. মুভমেন্টের মাধ্যমে অলসতা কাটিয়ে উঠুন

যদি আপনি এই ধারণা করে থাকেন যে ফিটনেস কেবলমাত্র জিমে গেলেই হয় বা ফিটনেস কেবলমাত্র অল্প বয়স্ক ফ্যাশনেবল তরুণদের জন্য তাহলে আপনার এই ধারণাটি ভুল। ফিটনেস হল আপনার দৈনিক চলাফেরার স্তম্ভ যা আপনাকে একটি অলস (inactive) জীবনযাত্রার ফলশ্রুতিতে প্রাপ্ত নেতিবাচক স্বাস্থ্যের পরিণতি থেকে রক্ষা করে। সত্যি বলতে, শরীরের যেকোনো ধরনের নড়াচড়াই ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে, আমাদের সমস্যা এটা নয় যে আমরা কম ব্যায়াম করি, সমস্যা হল আমরা কম নড়াচড়া করি। আমরা দৈনিক অফিসে প্রায় আট ঘণ্টা বসে থেকে ল্যাপটপে কাজ করি এবং আমাদের শরীরকে একদমই ব্যবহার করিনা।

রাসূলুল্লাহ সা. এবং তার সাহাবীগণ কর্মক্ষম জীবন যাপন করতেন, যা তাদের বৃদ্ধবয়স পর্যন্ত কাজে দিত। বেশ ভালোভাবে বর্ণিত আছে যে, ওমর ইবনুল খাত্তাব বলতেন, “তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তীরন্দাজি এবং ঘোড়া চড়তে দেখাও”। সেই সময়ের সবচেয়ে ক্রিয়াশীল তিনটি খেলা ছিল এগুলো।

২. আপনার ইনপুট অপটিমাইজ করুন

অনেক মুসলিমই একমত যে রামাদানে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অনেকেই সাংস্কৃতিক খাবার, চিনিযুক্ত মিষ্টান্ন এবং বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে রীতিমত হিমশিম খান। তাই, রামাদানে আপনার খাদ্যতালিকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মূলনীতিটি হল ভারসাম্য। আপনি আপনার সবধরণের পছন্দসই ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং এমনকি মাঝে মাঝে মিষ্টান্ন উপভোগ করতে পারেন, তবে ভুলে যাবেন না যে সাহরী এবং ইফতার হচ্ছে দীর্ঘ সময় সিয়াম পালনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আপনার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেওয়ার এবং পুনরায় শক্তি উৎপাদন করার সুযোগ। তাই, আপনার ঘরবাড়ি ও অফিসের কাজ, চলাফেরা, রাতের ইবাদাত এবং পরবর্তী দিনে সিয়াম পালনের সময় ইবাদাত করতে পারার সম্ভাবনাসমূহ মূলত সাহরি ইফতারে আপনার নির্বাচিত খাবার থেকে প্রাপ্ত শক্তির উপর নির্ভর করে।

৩. রিচার্জ (পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের মাধ্যমে ক্লান্তি এড়িয়ে চলুন)

রামাদানে রাতগুলো অনেক ছোট হয়। তাই রাতের সালাত ও ইবাদাতের ব্যস্ততার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো মুশকিল হয়ে যায়। তবে, রামাদানের সময় মুসলমানদের আচরণ নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৬০% সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি যারা রাত ১১ টার পরে জেগে থাকেন তারা তাদের জাগ্রত থাকার কারণ হিসেবে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটনো এবং টিভি দেখাকে দায়ী করছেন!

যেহেতু রামাদানের রাতগুলো ইবাদাত ও বারাকাহ লাভের যেমন একটি মূল্যবান সুযোগ, তেমনি আমাদের দেহের বিশ্রাম, মেরামত ও রিচার্জের জন্য একটি প্রয়োজনীয় সময়। তাই, রাতের বেলা প্রথমে আপনার ইবাদাতকে এবং তারপরে আপনার ঘুমকে এবং ঘুমের মাধ্যমে বিঘ্নতা কাটানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তারাবিহ এর পরে মাসজিদে ঘোরাফেরা পরিহার করে এই মুহুর্তগুলোকে ইবাদাত বা বিশ্রামের জন্য যথাযথভাবে ব্যবহার করা দরকার।

সূত্র: ‘প্রোডাক্টিভ রামাদান‘ বই থেকে
লেখক: মুহাম্মাদ ফারিস, আলী হাম্মুদা

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *