১৪ ফেব্রুয়ারি: ভালোবাসা দিবস নাকি যিনা দিবস

তার কাজল কালো চোখের নিঃসীম মায়ায় ডুবে যাওয়া, মুগ্ধতার আবিররঙা একেকটি মুহূর্তের প্রতিটি ক্ষণ হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করা, তার হাতে হাত রেখে দূর বহুদূর নীরবে হেঁটে চলা কিংবা তার রিনিঝিনি হাসির ঝঙ্কারে মুগ্ধ হয়ে নির্নিমেষ নয়নে তার দিকে চেয়ে থাকা…

ভালোবাসা। বনী আদমের মধ্যে কে আছে এমন, যে ভালোবাসার কাঙাল হয়ে নেই? ভালোবাসার মানুষটা নেই তো, জান্নাতের মধ্যে থেকেও যেন মনে হয় কী যেন একটা নেই। কোথায় যেন একটা শূন্যস্থান থেকে গেল, কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা রয়ে গেল। বুকটা বড় খালি খালি করে, সবকিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা আর অসম্পূর্ণ লাগে। আমাদের সবার বাবাও তো এই অনুভূতির মধ্য দিয়েই গিয়েছিলেন। আমরা না হয় এই জরাজীর্ণের আঁতুড়ঘরে বসে ভালোবাসার কাঙাল হই, তিনি তো ছিলেন জান্নাতে; তবে কেন ওই সুখের রাজ্যে সবকিছু পেয়েও কেন তার বুকে বাজলো এক আকাশ শূন্যতা?

কারণ, পুরো সৃষ্টিরহস্যের চাবিকাঠি যাঁর হাতে, সেই মহান আল্লাহর সুনিপুণ কারিগরিতে এভাবেই গড়ে উঠেছি আমরা। এভাবেই তো বানানো হয়েছে আমাদের যে, জগতের সব পেয়ে গেলেও শুধু ঐ ‘একজন’কে না পাওয়ার শূন্যতা গ্রাস করে নেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির পূর্ণতাকে। আর তাই তো আমাদের মহান রব তাঁর বান্দার জন্য সৃষ্টি করলেন তার সঙ্গিনী। আদমের পাঁজর থেকে সৃষ্টি করলেন হাওয়াকে, মুগ্ধ হলেন আদম, বিয়ের মধ্য দিয়ে রচিত হলো মানব ইতিহাসের প্রথম প্রেমের কাব্য; আদমের জান্নাত যেন এবার পূর্ণতা পেলো। আলাইহিমাস সালাম।

সেই থেকেই তো শুরু। প্রেমের জন্য মানুষের এই ক্ষুধা তাই চিরন্তন, এটা তার মজ্জাগত। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে মানবজাতি তাই বিয়ের মাধ্যমেই গড়ে তুলতো প্রেমের সৌধ আর এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো মানবসভ্যতা। তারপর একদিন…

একদিন এলো কিছু বেনিয়ার দল। মানুষের স্বভাবজাত সবকিছুই হয়ে উঠলো তাদের ব্যবসায়ের পণ্য। ভালোবাসার মতো পবিত্র অনুভূতিও বাদ পড়লো না তাদের শয়তানি খপ্পর থেকে। রোমান এক সেইন্টের নাম আর কিছু কাহিনীকে পুঁজি বানিয়ে তারা নেমে পড়লো “প্রেম ব্যবসায়”। মানুষকে শেখালো প্রেম মহান, প্রেম সুন্দর; তবে সেটা হচ্ছে বিয়ের আগেই প্রেম। যে প্রেমে দায়িত্ব নেই, যে প্রেমে কর্তব্য নেই। আছে শুধু ভোগ আর মজামাস্তির উপাদান। প্রেমের ক্ষুধায় কাতর তারুণ্য আগামাথা কিছু বিবেচনা না করেই দলে দলে আত্মাহুতি দিলো এই বেনিয়াদের জ্বালানো আগুনে। পুড়লো, কাতরালো, শেষ হলো। সাথে পুড়ে ছাই করলো সত্যিকারের ভালোবাসার পবিত্রতাকে!

ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র নামে ভালোবাসার যে ফেরি করে বেড়ায় প্রাচীন শয়তানের নব্য চেলারা, সেখানে আসলে হয়টা কী? কীসের প্রচার করে তারা? আসলেই কী তারা ভালোবাসতে শেখায়? যে ভালোবাসা আর প্রেমের জয়গানে তাদের বেহুশ হবার যোগাড়, আসলেই কি সেটা ঐ ভালোবাসা আর প্রেম যার সূচনা হয়েছিল এক সুরভিত উদ্যানে? ওরা কি সেই ভালোবাসার গল্প শোনায় যেখানে শিশিরের মতো ঝরে পড়ে মহান রবের করুণাধারা? ওরা কি সেই কাছে আসার কথা বলে, যে কাছে আসায় থাকে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি?

তবে কেন আমরা ডাস্টবিনে ডাস্টবিনে নাড়িছেঁড়া ভ্রুণের মিছিল দেখি? কেন আমরা ভিডিও বানিয়ে প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেইলের নিকৃষ্ট গল্প শুনি? কেন আমরা যৌনতা ছাড়া আর কোনো কিছুকে তাদের প্রচারণার কেন্দ্রে দেখি না? তবে কেন প্রেমিকাকে হতে হয় গণধর্ষণের শিকার? কেন হতে হয় প্রেমকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ভিক্টিম? এতোই যদি প্রেমের জয়জয়কার, তবে কেন হচ্ছে এতো ডিভোর্স? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি এ ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক জমিদাররা কখনো দিতে পারবে?

পারবে না!

আসুন আপনাদেরকে তাদের প্রেম-ভালোবাসা আর ভ্যালেন্টাইনের একটা চিত্র দেখাই। এর অনেক কিছুই হয়তো আপনারা আগে থেকেই জানেন, তবুও এখানে আমরা সামগ্রিক একটা চিত্র দেখাতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

তারা যে প্রেমের গান গায়, বাস্তবে সেটা হচ্ছে স্রেফ মোহ। ভালোবাসা কখনোই প্রথম দৃষ্টিতে হয়ে যায় না। যুগ যুগ ধরে যে মিথ্যা আপনি শিখে এসেছেন যে “Love at First Sight”, সেটা কখনোই ঘটে না। কিন্তু কিছু একটা তো ঘটে, সেটা তাহলে কী? হ্যাঁ, অনেক সময়ই প্রথম দেখাতেই মন তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে কিংবা তার প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। এটাকে বলে “Infatuation” বা মোহ। এটা ভালোবাসা নয়।

এই মোহকেই তারা প্রচার করে বেড়ায় ভালোবাসার ট্যাগ দিয়ে। এই মোহ থেকেই হয় কাছে আসা, তারপর বিছানায় যাওয়া, শরীরের স্বাদ নেওয়া আর তারপর আস্তে আস্তে দূরে সরে যাওয়া। সরে না গেলেও সেই আকর্ষণ আর না থাকা, যেটা মিলিত হওয়ার আগে থাকে। আপনি এই মিথ্যুকদের কখনোই দেখবেন না যে বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে রাখার কথা বলতে। এটা তাদের কাছ থেকে কখনোই দেখবেন না যে বিয়ের মাধ্যমেই ভালোবাসার মধুর চর্চা করতে। কারণ এটা তাদের এজেন্ডা না। তারা চায় ভ্যালেন্টাইনে আপনি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরবেন, এ দিন উপলক্ষে নতুন ড্রেস কিনবেন এবং পার্টনারকে গিফট দেবেন। তাকে নিয়ে শহরের এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবেন আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে পেটপূজা করে আসবেন। তারপর বিদায় নেবার আগে দুজনে এক বিছানায় মিলিত হবেন। এজন্য আবার অনেক অফার-টফারও দিয়ে থাকে ওরা। এতে যাতে কোনো “দুর্ঘটনা” না ঘটে, সেজন্য তো প্রটেকশনের রমরমা অফার সবসময়ই থাকে ওদের। আর তাও যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলেও আছে দরকারি সব ব্যবস্থা। এই হচ্ছে খুব সংক্ষেপে পুঁজিবাদী ডাকাতদের ভ্যালেন্টাইনের প্রেমব্যবসা আর এর মাধ্যমেই সফল হয় তাদের কোটি কোটি টাকার জঘন্য খেলা।

এই খেলা চলতে থাকে সারাবছর জুড়ে। কিন্তু তথাকথিত এই প্রেমদিবসে এসে এটা তার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে বসে। ভাইরাল ভিডিও, পর্ন আর মুভি ওয়ার্ল্ডের নোংরা সব ক্লিপ দেখে দেখে উত্তেজিত তরুণরা এদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে শরীরের স্বাদ নিতে। পিছিয়ে থাকে না মেয়েরাও। চলে এক জঘন্য মহোৎসব আর আড়ালে দাঁত বের করে হো হো করে হাসে শয়তান আর তার গোলামেরা। যিনার এই মহোৎসবের দিনের রেশ রয়ে যায় বাকি পুরোটা বছর; চলতে থাকে গর্ভপাত, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, খুন আর শিশুহত্যার রোমহর্ষক সব কারনামা।

কাগজে কলমে ৯০ ভাগ মুসলিমের এই দেশেও আড়ম্বরে পালিত হয় এই যিনা দিবস। বরং এর ধারাবাহিকতা শুরু হয় আরো আগে থেকে। এক সপ্তাহের মতো সময়ে প্রতিটি দিনকে আলাদা আলাদা নাম দিয়ে তারা বরণ করে নেয় যিনা দিবসকে। যিনার একেকটি উপলক্ষকে একেকটি দিবসের নাম দিয়ে বিষয়টাকে রীতিমতো বড়সড় করে উদযাপন করা হয়। যিনা দিবসকে কেন্দ্র করে চলে নানা অফার, গরম হয়ে ওঠে কোম্পানিগুলোর ভাণ্ডার।

আফসোসের বিষয় হলো, আমরা, ৯০ ভাগ মুসলিমরা, আমাদের একটু দেখারও সময় হয় না এখানে ইসলাম কী বলে। কী বলেন আল্লাহ, কী বলেন তাঁর রাসূল। না, আমাদের এতো সময় নেই। প্রেমই হচ্ছে মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, প্রেম ছাড়া জগৎ শূন্য। অতএব, ইসলাম কী বলে সেটা দেখার টাইম নেই আমাদের। আসলেই?!
ইসলাম তো প্রেম নিষেধ করেনি। কেনোই বা করবে? বিধান দিয়েছেন যিনি, প্রেমের এই অনুভূতিও তো দিয়েছেন তিনি। তিনি পুরুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন নারী আর নারীর জন্য পুরুষ। দিয়েছেন সুন্দরতম বিধান, পছন্দের নারীকে প্রস্তাব দাও, উপযুক্ত মোহরানা দাও আর বিয়ে করে তার অধিকার বুঝে নাও। তারপর চুটিয়ে প্রেম করো, কে না করছে তোমাকে?

এভাবেই তো পৃথিবীর প্রথম প্রেমের সূচনা ঘটেছিল। বাবা আদম আলাইহিস সালাম মুগ্ধ হয়েছিলেন মা হাওয়া আলাইহাস সালামকে দেখে, তারপর তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। এরই মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল পবিত্র প্রেমের। সত্যিকারের প্রেমের। যে প্রেমে নেই কোনো ক্লেদ, নেই কোনো নোংরামি। যে প্রেমের সাথে মিশে আছে রবের ভালোবাসা, তাঁর পক্ষ থেকে অবারিত রহমত। সত্যিকারের প্রেমে তো কোনো বারণ নেই মুসলিমদের। বরং স্ত্রীকে মন উজাড় করে ভালোবাসতেই তো শেখায় আমাদের ইসলাম। স্বামীর জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতেই তো উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম। দুজনের ভালোবাসায় সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই তো নির্দেশনা দেয় ইসলাম। এই ভালোবাসার সম্পর্ক আর প্রেমকে বাদ দিয়ে কীসের পেছনে তবে দৌড়াচ্ছে মুসলিম যুবক-যুবতীরা? যার পেছনে প্রাণপণ ছুটে যাচ্ছে তারা, সেটাকে কি আসলেই প্রেম বলে? আপনারা কি বুঝতে পারছেন মুসলিম হিসেবে, মানুষ হিসেবে এগুলো আপনাদের সাথে কতোটা বেমানান?

কাউকে ভালো লেগে যেতেই পারে। কারো পেছনে ঘুরঘুর না করেও, ইচ্ছেমতো মেয়ে দেখে দেখে চোখটাকে না পচিয়েও হঠাৎ করেই এক নজরের দেখায় কাউকে মনে ধরে যেতেই পারে। খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তার প্রতি মন অনুরক্ত হতে পারে। তাকে কাছে পেতে খুব টানতে পারে মন। এমনো হতে পারে যে তাকে সেভাবে না দেখেও, না জেনেও মন তার জন্য উতলা হয়ে উঠতে পারে। ইসলাম একে নিন্দা করে না। এরকম হলে খোঁজ নাও। বৈধ পথে এগোও। যদি দেখো, সে সবদিক থেকে তোমার উপযুক্ত এবং অবশ্যই দ্বীনের বিষয়ে সিরিয়াস, তবে প্রস্তাব দাও। কবুল হলে আলহামদুলিল্লাহ আর না হলেও সমস্যা নেই। দুনিয়া শূন্য হয়ে যায়নি, মনটাও একজনের কাছেই রেখে দিতে হবে, এমন ক্বসমও কেউ তোমাকে দেয়নি। কিন্তু স্বাভাবিক পথে না এগিয়ে যা তুমি করে বেড়াচ্ছো, সেটা কি আসলেই ফর্মে লেখা তোমার মুসলিম পরিচয়টার সাথে খাপ খায়? একটু ভেবে দেইখো!

হ্যাঁ, আমাদের অনেকেই জীবনের বিভিন্ন সময় প্রেমে পড়ে যাই। হয়তো এখনো অনেকে প্রেমের মধ্যেই আছি। হয়তো সে কাছে আছে, হয়তো নেই। তবুও তাকে ভালোবেসে যাচ্ছে মন, ভুলতে পারছে না তাকে। হ্যাঁ, প্রেমরোগে আক্রান্ত আমরা অনেকেই হয়ে আছি। অনেকে হয়তো আগে ছিলান। আগে হয়তো বুঝতাম না ভালোমন্দ এতোকিছু, এখন বুঝি। কিংবা হয়তো সব জেনেবুঝেও মন মানাতে পারিনি বলে তার সাথে জড়িয়ে গিয়েছি। আল্লাহর অবাধ্যতায় মনের মধ্যে দাগ কাটে, কিন্তু তার জন্যও তো মনটা একইসাথে কাঁদে। এ রোগ নয় তো কি?

প্রেমরোগ আর এর চিকিৎসা নিয়ে আসলে বলার মতো আছে অনেককিছুই। এই লেখাটায় অতো বিস্তারিত আলাপে আমরা যাবো না। কিন্তু কিছুটা হলেও একটা আইডিয়া দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

একেবারে প্রথমেই আমাদের বলতে হবে আল্লাহর প্রতি ভয়ের কথা। এ এমন এক মহৌষধ, যা সারিয়ে তুলতে পারে যেকোনো রোগকে। আল্লাহকে যথাযথভাবে না চেনা ও তাঁকে সঠিকভাবে ভয় না করা থেকেই আমাদের সব সমস্যার সূচনা হয়। তাই যেখান থেকে সমস্যাটা শুরু, সেখানেই যদি ফিরে যাওয়া যায় তাহলে সমাধানটাও পাওয়া যায় ঠিকঠাকভাবে। আল্লাহর প্রতি ভয় একদিনের অর্জন নয়। জগতের যেকোনো কিছু পেতেই সময় লাগে, শ্রম লাগে। এক্ষেত্রেও হিসেব একইরকম। বিশেষ করে আল্লাহকে ভয় করেন, এমন মানুষের সংস্পর্শে থাকলে বিষয়টা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার কমতি থেকেও আমাদের বিচ্যুতি ঘটে। মূলত আমাদের অনুভূতির কেন্দ্রে আল্লাহ যখন থাকেন না, তখনই পা পিছলায় আমাদের। যখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আর ভয় দুটোই থাকবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে অবৈধ প্রেমের সঞ্চার ঘটবে না। আল্লাহকে যতো ভালোবাসা যাবে, তাঁর জন্য ত্যাগ করার মানসিকতাও ততো শক্তিশালী হবে।

আল্লাহকে যেসব জায়গায় বেশি বেশি স্মরণ করা হয়, সেসব জায়গায় যাওয়া ও সেরকম মানুষের সাথে ওঠবস করা। এটা এই রোগের চিকিৎসায় খুবই উপকারি।

ধৈর্য ধরতে শেখা। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। দু’আয় হাত উঠিয়ে বারবার সাহায্য চাওয়া। ভালো কাজে নিজেকে ব্যস্ত করতে সচেষ্ট হওয়া। ভালোবাসার মানুষের নেগেটিভ দিকগুলো চিন্তা করা। মৃত্যুর কথা চিন্তা করা। আখিরাত, কবর, জাহান্নাম এগুলোর কথা চিন্তা করা। রোযার মাধ্যমে নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করা। বিয়ের মাধ্যমে সত্যিকারের ভালোবাসার চর্চা করতে সচেষ্ট হওয়া। এরকম অনেক পথ আছে যার মাধ্যমে প্রেমরোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। এই সংক্ষিপ্ত লেখায় আমরা সব বিস্তারিত উল্লেখ করলাম না। তবে এ সংক্রান্ত ভালো ভালো কিছু বইয়ের সন্ধান আমরা লেখার শেষে দিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।

বিয়ে নিয়ে দু’চারটা কথা বলি। যৌবনে পদার্পণের পর থেকেই মানুষ একজন সঙ্গী/সঙ্গিনীর অভাববোধ করতে শুরু করে। প্রেমে পড়ার পেছনে এই তাড়নার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই চাহিদা যখন তুঙ্গে, তখনই সেটা নিবারণের ব্যবস্থা করাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই যৌবনের শুরুতেই কিংবা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে ফেলার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের আগের জেনারেশন পর্যন্ত এই দ্রুত বিয়ের প্রচলনটা ছিল। কিন্তু আধুনিকতার অভিশাপে আজ বিয়ে হয়ে গিয়েছে সোনার হরিণ। কতোভাবে, কতো উপায়ে যে বিয়েকে আজ বিলম্বিত করা হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হাদীসে বলা হয়েছে, বিয়েকে সহজ করতে আর যিনাকে কঠিন করতে আর আমরা করে যাচ্ছি ঠিক এর উল্টো। আমরা বিয়েকে নানা শর্ত আর আচার-অনুষ্ঠানের বেড়াজালে বেঁধে রেখে যিনাকেই করে দিয়েছি সহজ। মানুষের শরীর ও মনের চাহিদার প্রতি গ্রাহ্য না করার ফলাফল দাঁড়িয়েছে যিনার অবাধ প্রচলন। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, টাকাপয়সা সহ আরো হাজারটা অজুহাতে বিয়েকে আজ এতোটা কঠিন করে ফেলা হয়েছে যে, যিনায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া যুবসমাজের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকছে না। আর যে যিনায় লিপ্ত হচ্ছে না, তাকেও যেতে হচ্ছে বর্ণনাতীত কষ্টের মধ্য দিয়ে। অথচ ১৪ ফেব্রুয়ারির যিনা দিবস সহ বছরব্যাপী যিনার মহোৎসবকে আমরা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারতাম, যদি আমাদের সন্তানদের হালাল উপায়ে তাদের শরীর ও মনের চাহিদাগুলো মেটানোর ব্যবস্থা করে দিতাম।

লেখাটা আর লম্বা করবো না। তবে একটাই অনুরোধ থাকবে, আসন্ন ১৪ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আপনারা সচেতন হন। এই দিনটিকে ভালোবাসা দিবস না বলে যিনা দিবস বলুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান। মানুষের চোখে ধূলো দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যে নোংরা ব্যবসায় মেতে আছে, আপনারা তাতে পানি ঢেলে দিন। এতো বেশি পরিমাণে এই দিনটিকে যিনা দিবস হিসেবে প্রচার করুন, যাতে প্রকাশ্যে কেউ কিছু করতে চাইলেও লজ্জায় পড়ে যায়। তবে সবার আগে নিজের মধ্যে এই বোধ গড়ে তুলুন এবং স্বল্প পরিসরে হলেও এগিয়ে আসুন এই অন্যায়ের প্রতিরোধে।

ভালোবাসা হোক পবিত্র, সম্পর্কগুলো গড়ে উঠুক রাহমানের রহমতের ছায়াতলে। বিশুদ্ধ ভালোবাসার ঝিরঝিরে শীতলতায় জুড়িয়ে যাক আমাদের প্রাণগুলো। সত্যিকারের ভালোবাসার সুধায় মিটে যাক সব তৃষিত হৃদয়ের তৃষ্ণা। আসুন, যিনাকে দূরে ঠেলি আর আল্লাহকে ভালোবাসি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন, আমাদের গুনাহতপ্ত অন্তরগুলোকে শীতলতা দান করুন। আমীন।

প্রেম-ভালোবাসা-যিনা সংক্রান্ত উপকারি কিছু বইয়ের তালিকা:

১। আকাশের ওপারে আকাশ
২। প্রেমরোগ : প্রতিপাদন ও প্রতিবিধান
৩। অবৈধ প্রেম থেকে দূরে থাকুন
৪। প্রেম ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব

সবগুলো বই একসাথে অর্ডার করতে ক্লিক করুন: https://wafi.life/5-books-on-haram-relation


Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *