বই পড়েন আর গল্প ভালোবাসেন না, এমন পাঠক বোধহয় খুঁজে পাওয়া ভার। বরং গল্পের রসে বুঁদ হয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলে বসে আছেন, এমন সব গল্পপাগলদেরই খোঁজ মেলে অনায়াসে। শিশু থেকে বুড়ো, গল্পের মজায় মজে থাকেন সবাই।
তা গল্প তো হরেক রকমেরই আছে। এটার গল্প, ওটার গল্প, হাবিজাবি এবং ইত্যাদি ইত্যাদি সমগ্র। গল্পের ভাণ্ডারটি মা শা আল্লাহ, ইয়াআআআআ বড়! কিন্তু তারপরেও, এতো এতো কালেকশন থেকে কিছু থাকে এমন যেগুলো আমাদের মনে করে নেয় আলাদা একটি স্থান। তারা প্রথমে দাপটের সাথে আমাদের মনের ঘরে ঢুকে পড়ে, পরে বেছে বেছে একেবারে মনের মাঝখানটায় আসন খুঁজে নেয় আর তারপর সেখানটাতেই একদম আস্তানা গেড়ে বসে। আমাদের সবার জীবনেই খুঁজলে এমন কিছু গল্প বা গল্পের বইয়ের গল্প শোনা যাবে।
গল্পের এই রসকে আরো কিছুটা উপচে দিতে আমরা এলাম আমাদের চোখে সেরা পাঁচ গল্পের বই নিয়ে আপনাদের কিছু রসদপাতির যোগান দিতে। দেখা যাক আপনাদের আর আমাদের পছন্দ কতটুকু মিলে যায়। তো শুরু করা যাক।
১। যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির
জীবন তো কতো রঙের, কতো ঢঙের আর কতো বর্ণেরই হয়। কতো শতো রাস্তায় ঘুরেফিরে শেষ হয়ে যায় কতো কতো জীবন! এই যে নানান পথে শেষ হয়ে যাওয়া একেকটি জীবন, এগুলোই কি আসল জীবন? জীবন তো সেটাই যেখানে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নেওয়া যায় মুক্তির স্বাদ। যে জীবন কোনো দুষ্টু বালকের হাতে সুতোয় বাঁধা ঘাসফড়িং এর জীবন নয়। যে জীবন বোতলে ভরা আলো জ্বলা জোনাক পোকার জীবনের মতো নয়। যে জীবন কখনো পরাজয় মেনে নেয় না। যে জীবন বেঁচে থাকে কেবলই অদ্বিতীয় এক সত্তার জন্য, এক বিঘত বুকে এক আকাশকে ধারণ করে বাঁচে যে জীবন। জীবন তো সেটাই। এই দ্বীন, এই তাওহীদ তো সেই জীবনেরই পাথেয় যোগায়। “যে জীবন ফড়িঙের যে জীবন জোনাকির” বইটি সেই জীবনের অঙ্গে অঙ্গে মিলে থাকা, মিশে যাওয়া কিছু সুন্দরতম অনুভূতি আর চিন্তার লেখ্যরূপ মাত্র। প্রাঞ্জল ভাষায় ঝরঝরে বর্ণনাভঙ্গিতে অনন্য এক জীবনের বোধ লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায়।
২। আই লাভ ইউ
শুদ্ধ প্রেমের আবেশে ঘেরা বিশুদ্ধ ভালোবাসার নির্মল এক গল্পগ্রন্থের নাম “আই লাভ ইউ”। এই ত্রয়ীতে যে শুদ্ধতম প্রেমের সাতকাহনও রচনা করা সম্ভব, সেটাই তো আজকাল এক অলীক কল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শূন্যতার মধ্যে শায়খ আতিক উল্লাহর প্রাঞ্জল হাতের নিপুণ লেখনী যে সাহিত্যরসের নির্ঝরিণী ছোটায়, সেটা সত্যিই অনির্বচনীয়। জনপ্রিয় এই গল্পকার তাঁর দক্ষ হাতে যেভাবে ভালোবাসার আবিররঙা শব্দগুলো বুনে গেছেন একের পর এক, সেটা নিঃসন্দেহে ছুঁয়ে যেকোনো পাঠকের মন।
৩। দুআ কবুলের গল্পগুলো
দুআ—মুমিনকে দেওয়া এক অনন্য উপহার। এটা এমন এক মাধ্যম, এমন এক লক্ষ্যভেদী তীর যার সঠিক ব্যবহার নিয়ে আসে বিশাল থেকে বিশালতর, অসম্ভবপ্রায় সব অর্জন। আমাদের আশেপাশেই দুআ কবুলের এমন অনেক অসাধারণ ঘটনা ঘটে যায়, যার খবর আমাদের তেমন থাকে না। কিন্তু একটি একনিষ্ঠ দুআ পাল্টে দিতে পারে জীবনের মোড়। আল্লাহর দরবারে আন্তরিক রোনাজারি নিয়ে আসে কঠিন সমস্যার অভাবনীয় সব সমাধান। শয়তানের ধোঁকায় মানুষ ভুলে যায় তার সব সমস্যা, দুঃশ্চিন্তা আর ঝামেলা থেকে মুক্তির চাবিকাঠি আল্লাহর কাছেই। ধর্ণা দিতে হলে দিতে হবে শুধু তাঁর কাছেই। সেই অনিবার্য সত্যটিকে বারবার মনে করিয়ে দিতে দুআ কবুলের অসাধারণ কিছু সত্য গল্প নিয়ে চমৎকার এক আয়োজন “দুআ কবুলের গল্পগুলো”।
৪। জীবন যেখানে যেমন
জীবনের গল্পের চেয়ে বিচিত্র গল্পসমগ্র কি আর হতে পারে, বলুন? এই জীবন কখনো আমাদের হাসায়, হাসির কলতানে ঝলমলে হয়ে ওঠে সব। কখনো বা জীবনের দুকূল ছাপিয়ে উপচে পড়ে কষ্টের ঢেউ, বিষাদের গাঢ় ছায়ায় ঢেকে যায় জীবনাকাশ। জীবনের কিছু গল্প থাকে এমন, যা আমাদের নিত্য ব্যস্ততার যাঁতাকলে পিষ্ট হৃদয়ে নিয়ে আসে নতুন প্রাণের জাগরণ। আবার কিছু গল্প এমনও থাকে, যা ফিরে আসুক কারো জীবনে, এমনটা আমরা চাই না। “জীবন যেখানে যেমন” বইয়ে খ্যাতিমান লেখক আরিফ আজাদ আমাদের আশেপাশের সাধারণ জীবনের মধ্য থেকেই তুলে এনেছেন এমন কিছু গল্প, যেগুলো আমাদের ভাবাবে, একটু হলেও থেমে দাঁড়াতে বাধ্য করবে, আবেগের তাপে অশ্রুসজল করে তুলবে আপনার চোখ।
৫। ফেরা
পাখি সারাদিন ইতিউতি উড়ে বেড়ায়, আকাশের বুকে ঘুরতে তার যেন ভীষণ স্বাধীনতা! কিন্তু বেলাশেষে যখন ব্যথা হয়ে যায় ডানা, ক্লান্ত-অবসন্ন দেহ যখন এলিয়ে পড়তে চায় বিশ্রামের কোলে আকাশ তখন আর টানে না। পাখি তখন ফিরে চলে তার নীড়ে, তার প্রশান্তির আশ্রয়ে। “ফেরা” তেমনই দুই বোনের নীড়ে ফেরার গল্প। মানবজাতির আদি ও অকৃত্রিম নীড়, ইসলামের শীতল আশ্রয়ে ফেরার এক অনিন্দ্যসুন্দর, সত্য গল্প।
1 Comment
Ai rokom arro golpo dekte chai , oshadharon shob lekha
Add Comment