পাপ কাজে বাধা দেবেন যেভাবে

প্রতিদিন চলতে, ফিরতে অনেক ঘটনার সাক্ষী হই আমরা। অনেক অন্যায়, অনেক পাপ কাজ ঘটে যায় আমাদের চোখের সামনেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সেগুলোর সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করে থাকি।

কিন্তু এটাই কি আমাদের করবার কথা ছিল? চলুন, তার আগে কিছু দৃশ্যপট কল্পনা করা যাক।

ক) রিকশাচালক ও আরোহীর মধ্যে ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি। রিকশাচালক দাবি করছেন, তাকে ন্যায্য ভাড়াটা দেওয়া হচ্ছে না। আর আরোহীর কথা হচ্ছে, যা দিচ্ছেন সেটা একদম ঠিকটাই দিচ্ছেন। এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আরোহী হাত তুলে বসলেন চালকের গায়ে।

খ) তুমুল সাউন্ড দিয়ে গান বাজাচ্ছে একদল তরুণ কিংবা পাড়ার কোনো গানের দোকান। আশেপাশে থাকা মসজিদ, হাসপাতাল, বাসাবাড়ি—কোনো কিছুকেই পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না।

গ) রেস্টুরেন্টে গেছেন মজার কিছু খাবার খেতে। একটু সামনেই হালকা আড়াল দেওয়া অংশে দেখতে পাচ্ছেন উদ্দাম যৌবনের নগ্নতা। ভেসে আসছে অশ্লীল কার্যকলাপের টুকরো কিছু আওয়াজ।

চাইলে এরকম আরো শতশত দৃশ্যপট লেখা যাবে অনায়াসে। আমাদের চোখের সামনেই নিত্যদিন ঘটে যাওয়া এই পাপগুলো আমরা দেখি, মনঃপীড়ায় ভুগি আর তারপর কিছু না করতে পেরে চুপচাপ সেগুলো এড়িয়ে যাই।

কিন্তু এভাবেই এড়িয়ে যাওয়া কি আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে? আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে কীভাবে আমরা প্রকাশ্য পাপে বাধা দিতে পারবো?

সৎ কাজে আদেশ আর অসৎ কাজে নিষেধ করতে বলার কথা কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এই কাজটির জন্যই –

“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।”
[সূরা আলে ইমরান ০৩ : ১১০]

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ দেখে, তাহলে সে যেন হাত দ্বারা এর সংশোধন করে দেয়। যদি এর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখের দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (উক্ত কাজকে ঘৃণা করবে), আর এটাই ঈমানের নিম্নতম স্তর।” (মুসলিম)

অতএব প্রকাশ্যে পাপ কাজ দেখে চুপ থাকবার অবকাশ নেই। চলুন, জেনে নেওয়া যাক প্রকাশ্য পাপে বাধা দেবেন কীভাবে।

১। হিকমাহ অবলম্বন করুন: প্রকাশ্যে পাপাচার সংঘটিত হতে দেখলে হিকমাহর সাথে সেটার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করুন। পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে ঠিক করে নিন আপনার কাজের পথ ও পদ্ধতি।

২। সামর্থ্যের ভিত্তিতে কাজ করুন: আপনি যদি শক্তি প্রয়োগে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তবে অবশ্যই সেভাবে কাজ করুন। এটাই হাদীসের নির্দেশনা। যদি এটা না পারেন, তবে মৌখিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করুন। পাপকাজে জড়িতদের সুন্দর বা প্রয়োজনে কড়া ভাষায় বাধা দিন। আর সেটুকুও যদি সম্ভব না হয়, তবে মন থেকে সেটাকে ঘৃণা করুন এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এরকম কাজে বাধা দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করুন। এভাবেই নিজের সামর্থ্য বুঝে বাধাদানে অগ্রসর হোন।

৩। সচেতনতা বাড়ান: অনেক সময় হয়তো আপনি একা প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে এই পাপের বিষয়ে আপনার আশেপাশের মানুষজনকে সচেতন করুন। তাদেরকে সজাগ করে তুলুন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে পাপাচার রুখে দিন।

৪। শক্তি অর্জন করুন: সমমনা ভাইদের নিয়ে দলবদ্ধ হোন এবং প্রকাশ্য পাপকে রুখে দেওয়ার মতো শক্তি অর্জন করুন। কারণ অন্যায় রুখে দিতে শক্তিমত্তার বিকল্প নেই।

৫। দাওয়াতি কাজের বিস্তার ঘটান: প্রকাশ্য পাপের বিস্তার রোধে দাওয়াতি কাজের বিস্তৃতি অত্যন্ত জরুরি। ফ্রি-মিক্সিং, প্রকাশ্য নগ্নতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা সহ প্রকাশ্যে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন পাপকে বাধাগ্রস্ত করতে দাওয়াতি কাজের ব্যাপক বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই।

সর্বোপরি, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং এর উপর ভরসা করে হিকমাহর সাথে অগ্রসর হওয়া—একজন মুসলিম হিসেবে প্রকাশ্য পাপাচারে বাধা দেওয়ার জন্য এটাই মৌলিক উপায়। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন, আমাদের শক্তি-সাহস বাড়িয়ে দিন। আমীন।

দাওয়াহ দেবার আরও কৌশল জানতে পড়ুন:

যেভাবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকবেন
লেখক : ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী

নবিদের দাওয়াতি পদ্ধতি
লেখক : শাইখ টিম হাম্বল

আল্লাহর পথে দা’ওয়াত
লেখক : ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

দাওয়াহ ও হিকমাহ
লেখক : রিফায়ি সুরুর

2 Comments

  • Sara Posted June 18, 2022 10:25 AM

    হিকমাহ্ কিভাবে অবলম্বন করব সেই পরিস্থিতিতে সেটাইতো বুঝতে পারছি না। কারো জীবনের একটা ছোট্ট বাস্তব উদাহরণ দিলে বুঝতে বেশি সুবিধা হতো ইনশাআল্লাহ

    • মহিউদ্দিন রূপম Posted June 26, 2022 4:13 PM

      আপনি লিস্টের শেষের বইটি পড়ে দেখতে পারেন। হিকমাহ নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে এই বইতে-
      দাওয়াহ ও হিকমাহ

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *