আসমানী ভালোবাসা: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

আচ্ছা, আপনার কি কখনও অবাক লাগে না, যখন দেখেন কেউ রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করছে!? প্রশ্ন জাগে না, আদৌ কি এই ভালোবাসা সত্য? আপনি কীভাবে এমন কাউকে ভালোবাসবেন, যার সঙ্গে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি, যাকে কখনও চোখেও দেখেন নি…যিনি কিনা ধরণীর বুকে এসেছিলেন হাজার বছর আগে, সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশে, ভিন্ন এক পরিবেশে…কীভাবে তাঁকে ভালোবাসতে পারেন, তাও আবার জীবনের চেয়েও বেশি?

আসলে রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ভালোবাসা কোনো সাধারণ ভালোবাসা নয়। এটি এমন কিছু যা আল্লাহ প্রদত্ত। মুমিনদের হৃদয়ে তিনি এই ভালোবাসা ঢেলে দেন। অন্যদিকে সাধারণ ভালোবাসাগুলো এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: যেমন, আপনি আপনার জীবন সঙ্গিনীকে ভালোবাসেন, কারণ, আপনারা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ খুঁজে পান, জীবনের লক্ষ্যগুলো ভাগাভাগি করে নেন, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করেন। আপনি আপনার বন্ধুদের ভালোবাসেন, কারণ, আপনারা কিছু একই গোছের কাজ করতে পছন্দ করেন, কিংবা একই অভ্যাস বা রাজনীতিতে বিশ্বাসী। শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসার কারণ, তারা আপনাকে শেখায়। একজন আবিষ্কারককে ভালোবাসার কারণ, সে এমন এমন কিছু আবিষ্কার করে যা আপনার জীবনে সহজতা এনে দেয়। সাধারণ ভালোবাসার এরকম বাহারি উদাহরণ আছে এবং এই সবগুলো ভালোবাসার কারণ ও প্রতিক্রিয়া আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

ভালোবাসার আরেকটি ধরণ আছে। এটাকে বলে রব্বানী ভালোবাসা। আল্লাহ্‌ তাআলা এই ভালোবাসা বান্দাদের অন্তরে পুরে দেন। জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম, প্রকৃতি দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কুরআনে বৈবাহিক ভালোবাসার আলোচনাতেও এই ভালোবাসার ইঙ্গিত আছে। সহজাত আকর্ষণের আলাপে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন, ‘তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও রহমত সৃষ্টি করেছেন।’ রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ভালোবাসাও অনেকটা এই গোছের। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে এটি দয়াপরবশ হয়ে উপহার দেন। আমরা এই ভালোবাসার কারণেই ইসলামের ওপর টিকে থাকতে পারি দিনের পর দিন, বাধা বিপত্তিগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি, পরীক্ষা থেকে পরিত্রাণ পাই। মোদ্দাকথা ব্যাহত দৃষ্টিতে আমাদের জীবনে নিয়ে আসে গতিশীলতা। কিন্তু তারপরেও আপনি অনুভব করেন, আপনার হৃদয়কে কিছু একটা টেনে নিয়ে যায় দ্বীনের ভালোবাসার দিকে। আপনার মনকে জুড়ে দেয় আল্লাহর ভালোবাসার সাথে, রাসূল (ﷺ)-এর ভালোবাসার সাথে। বার বার ভাবায়, কবে আসবে সেই দিন যেদিন পরকালে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করব, দেখা করব তাঁর ঝর্ণাধারা আল-কাউসারের পাশে!

এই ভাবনাগুলো আমাদের মনে প্রশান্তি বয়ে দেয়। কারণ, এর ফলে স্বয়ং আল্লাহ্‌ খুশী হোন। আল্লাহ্‌ চান আমরা তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে ভালোবাসি, যেন এই ভালোবাসা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে তাকে অনুসরণ করতে। ব্যক্তির একার, সমাজের, সবার জন্যই এটি কল্যাণকর।

নবীজির প্রতি ভালোবাসা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের ভালোবাসা। তাঁর ওপর দরুদ পাঠে মেলে আলাদা মিষ্টতা, আছে স্থিতি, ক্ষমা এবং দাসত্বের ছাপ। সাথে যোগ হয় উদারতা এক ভিন্ন আভা হয়ে। এটি আধ্যাত্মিক জগত থেকে আসা ভালোবাসা, স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। বহু মানুষ নবীজি (ﷺ)-কে দেখেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা ছিল বড়ই মধুর। অতুলনীয় এক অনুভূতি।

পরিশেষে এই ভালোবাসার একটি বাস্তব দিকও আছে। অসংখ্য মানুষ এর সাক্ষী, কেবল নিখাদ তাওবাহ এবং নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের ফলে তাদের সমস্যাগুলো দূর হয়ে গেছে, তাদের দুশ্চিন্তাগুলো উবে গেছে, রোগ সেরে গেছে। এজন্যই আমরা রাসূল (ﷺ)-কে সবসময় আমাদের পাশে অনুভব করি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এর প্রভাব পাই।

  • মূল লেখা: ড. সাদী আল-ইলমাসরি
  • ভাবানুবাদ: মহিউদ্দিন রূপম

আসুন, নবীজির সীরাত পড়ি, তাঁর সুন্নাহ দিয়ে গোটা জীবনটাকে সাজাই: সীরাতে রাসূল (সা.)

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *