অলসতার চিকিৎসা

কিছু বিষয় আছে যার ফলাফল তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় না। ভবিষ্যতে মেলে। পদে পদে আসে, পালাবদল করে আসে। অলসতা, বেখেয়ালিপনা, গাফলতি—এর অনেক নাম থাকলেও এটি এমন এক রোগ, যার খারাপ পরিণতি থেকে কেউ রেহাই পায় না। আমরা অলসতা অনুভব করি ঘুম থেকে উঠতে, অলসতা অনুভব করি কাজে-কর্মে, এমনকি নিশ্চিত সাফল্যের পথে অগ্রসর হতেও অলসতা অনুভব করি। আমাদের মনোবলকে প্রায়ই বাগে নিয়ে ফেলে অলসতা নামক এই কালপিট। ‘পরে করব’ গোলকধাঁধায় ফেলে রাখে দীর্ঘকাল। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যৎ হয় হতাশা এবং আফসোসের।

অলসতা নেই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। এটি সম্পূর্ণ মিটিয়ে দেয়াও দুরূহ ব্যাপার। তবে এর মাত্রাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারি বিইযনিল্লাহি তাআলা। কীভাবে? আসুন জেনে নিই:

(১) সর্বপ্রথম দুআ
দুআ মুমিনের হাতিয়ার। আর তাই দুনিয়ার সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ মানুষ নবীজি (ﷺ) এই হাতিয়ারের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে গেছেন। তাঁর একটি দুআ ছিল, প্রায়ই করতেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
‘আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অক্ষমতা থেকে, অলসতা থেকে, ভীরুতা থেকে এবং বার্ধক্য থেকে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই জীবন-মরণের পরীক্ষা থেকে এবং আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে।’ [সহীহ বুখারী (২৮২৩)]

(২) কম খান, কর্মোদ্যম থাকুন
অতি ভক্ষণ অলসতার দিকে ধাবিত করে, ঘুম ঘুম ভাব এনে দেয়। তাই নবীজি (ﷺ)-এর এই উপদেশটি আমাদের সবার মেনে চলা উচিত:
‘পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠ সোজা রাখার মত কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানি, আরেক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ [তিরমিযী (২৩৮০)]

(৩) অলসতার আলামত: হাই তোলা
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব দমন করবে। কেননা তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে।’ [বুখারী (১৯৯৩)]

(৪) প্রোডাক্টিভ মানুষদের সাথে চলুন
মানুষ তার মতই হয়, যার সাথে তার অধিকাংশ সময় কাটে। আপনি যদি অলস ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটান, তাহলে এমনটা আশা করা যায় না আপনার অলসতা দূর হয়ে যাবে। এ জন্য আপনাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের দেখে নিজের উন্নতি করা যায়, এমন মানুষদের খুঁজে বের করুন, তাদের সাথে সময় দিন। নবীজির এই হাদীসটি আমরা সকলেই জানি, ‘ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের ওপরেই থাকে। সুতরাং তার অবশ্যই চিন্তা করা উচিত, কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।’ [তিরমিযী, (২৩৭৮)]

(৫) অজুহাত দেবেন না
আল্লাহ বলেন, بَلِ الۡاِنۡسَانُ عَلٰی نَفۡسِہٖ بَصِیۡرَۃٌ ﴿ۙ۱۴﴾ وَّ لَوۡ اَلۡقٰی مَعَاذِیۡرَہٗ ﴿ؕ۱۵﴾
‘বরং মানুষ নিজের সম্পর্কে সম্যক অবগত। যদিও সে নানা অজুহাতের অবতারণা করে।’ [সূরা কিয়ামাহ, ৭৫: ১৪-১৫]

অজুহাত দিয়ে অন্যের আদালত থেকে নিস্তার পাওয়া গেলেও নিজের আদালত থেকে মুক্তি মিলবে না। বরং অলসতার অজুহাত ব্যক্তিকের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই অজুহাত দিবেন না ফরজ সালাতের ক্ষেত্রে, কারণ, আপনি জানেন এ জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। অজুহাত দেবেন না তাওবাহ করতে, কারণ, পাপের শাস্তি আপনাকেই ভোগ করতে হবে। অজুহাত দেবেন না নিজের ভুল স্বীকারে, কারণ, মনের তিল পরিমাণ অহংকারই যথেষ্ট ব্যক্তিকে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে।

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *