রমাদানে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে ইফতার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহজসাধ্যতার কথা ভেবে অনেকে ইফতারের জন্য বেছে নেয় ফাস্ট ফুড, আবার কেউ আছেন সারাদিনের না খেয়ে থাকাটা পুষিয়ে নিতে হরেক আইটেম দ্বারা ইফতয়ার করেন। প্রথমমত ফাস্ট ফুড শ্রেণীর খাবারগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি, তথাপি গলা উঁচু করে খাওয়ার পরে শরীর মনে মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলে। সারাদিন সিয়াম রাখার পর আমাদের শরীরকে স্বাস্থ্যকর খাবার দ্বারা পরিপুষ্ট করাই কল্যাণকর, সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে সংযমের মাসটা ইফতারের সময়ে এসে যেন ভোজোৎসবের মাসে পরিণত না হয়। তাই ইফতারে কী খাবেন, কোন খাবার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, এ বিষয়ে ৭টি টিপস দেয়া হলো: . ১. ইফতার শুরু করুন খেজুর এবং পানি দ্বারা —ইফতারের জন্য খেজুর খুব স্বাস্থ্যকর খাবার এ জন্য যে, এতে রয়েছে শর্করা এবং এটা পুষ্টি উপাদানের পুঞ্জীভূত উৎসের মতো কাজ করে। তাছাড়া এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেজুর দিয়ে ইফতার করা রাসূল ﷺ-এর অভ্যাস ছিল। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে। [সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৬), সুনানে তিরমিযি (৬৯৬), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে ৪/৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে] ২. শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন —গোটা শস্য এবং খাদ্য শস্য জাতীয় খাবার প্রয়োজনীয় ক্যালরি এবং শর্করার যোগান দেয় যা থেকে শরীর সারাদিন বঞ্চিত ছিল। স্যান্ডউইচ বানানোর জন্য লাল রুটি ব্যবহার করুন। তাছাড়া আরো খেতে পারেন পাস্তা, যদি সেটা বানানো সহজ হয়। এগুলোতে রয়েছে পুষ্টি ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আর এগলো শস্যের ভালো উৎস। (যা অন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রন করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।) ৩. ইফতারের সময় ভোজোৎসবে মেতে উঠবেন না —সারাদিন ক্যালরি থেকে বঞ্চিত থাকার পর খাবার গ্রহণ করতে আপনার পরিপাকতন্ত্র কিছুটা সময় নেয়, তাই আস্তে আস্তে, সহজভাবে খাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ সমস্যার উদ্রেক করতে পারে; আকস্মিক খাদ্য গ্রহণ গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টিনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে; এটা পাকস্থলীকে হঠাৎ করে একসাথে প্রচুর এনজাইম নিঃসরণ করতে বাধ্য করবে, যা অস্বস্তির কারণ হবে। অতএব ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণের কথা মনে রাখুন এবং খাবার ভালো করে চিবান। তাছাড়া প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও সমাচিন নয়। ৪. খাদ্য তালিকার মাঝে তরল খাবার রাখুন এবং প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করুন —পানিশূন্যতা রোধে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। পানি বিষাক্ত পদার্থগুলোকে ধুয়ে বের করে দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া টাটকা ফলের রস শর্করা, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের এক দারুণ উৎস। আপনি আরো খেতে পারেন মুরগীর স্যুপ বা ভাপে সিদ্ধ করার মুরগীর মাংস। এগুলো প্রোটিনে ভরপুর যা টিস্যু এবং পেশীতে শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে এবং শরীরকে সহজে ক্লান্ত হতে দেয় না। স্যুপ পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভালো উৎস যা অবসাদগ্রস্ততা এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ৫. তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলুন —কারণ, এ ধরণের খাবার হজম হতে প্রচুর সময় নেয় এবং আপনাকে এমন একটা অনুভূতি দেয় যেন আপনার পেট ভরে গেছে, কিন্তু বাস্তবে এগুলো পুষ্টি চাহিদা মেটায় না বা আপনাকে পরিপুষ্ট করে না। এগুলো ইফতারের জন্য কোন আদর্শ মেন্যু নয়, এমনিতেও না। যাই হোক, যদি খেতেই হয় তবে রাতের খাবারের সময় অল্প একটু খেতে পারেন। ৬. সময় হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ইফতার করুন —এটা কি দিয়ে ইফতার করবেন সে সংক্রান্ত কিছু নয়, বরং কখন ইফতার করবেন সেটা নিয়ে। সময়মত ইফতার করা রমাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ, অকারণে ইফতার করতে বিলম্ব করা বাঞ্ছনীয় নয়। সাহল ইবনে সাদ রাযি. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “মানুষ কল্যাণের মাঝে থাকবে যতদিন তারা ইফতার করতে দ্রুততা অবলম্বন করে।” [বুখারী ও মুসলিম] ৭. ইফতার শেয়ার করুন —ইফতারে বরকত বাড়াতে পারেন আপনার প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, অভাবী এবং অন্য যে কোন সিয়ামরত মুসলিমের সাথে ইফতার শেয়ার করে। রাসূল ﷺ বলেছেন: যে কেউ একজন সিয়ামরত ব্যক্তির জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও সিয়ামরত ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব রয়েছে যদিও সিয়ামরত ব্যক্তির সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। [ তিরমিযী ] . নফসকে নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদয় ও আত্মাকে নিয়মানুবর্তী করার অসংখ্য সুযোগ আমাদের সামনে এনে দেয় রমাদান; আল্লাহর আরো অনুগত হতে সাহায্য করে। এটা আমাদের শরীরের যত্ন নেয়া এবং একে নিয়মানুবর্তী করার জন্যও উপযুক্ত সময়। এই শিক্ষাই আত্মস্থ করতে হবে, ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকব, তবে একই সাথে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের শরীর স্বাস্থ্যকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছে, যাতে সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ, অস্বস্তি এবং পানিশূন্যতা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ সুন্দর থেকে রমাদান মাসটা সর্বোচ্চ ব্যবহারের তাওফীক দিক।

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *