রমাদানের আদর্শ রুটিন

রমাদানে আমাদের আগের রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। তাই আগেভাগে রমাদানের পরিবর্তিত শিডিউল অনুযায়ী নতুন রুটিন করে রাখলে রমাদান মাসকে আরো প্রোডাক্টিভভাবে আমল করে কাটানো সম্ভব হবে। আমাদের সবার জীবনযাত্রা ও দায়িত্বগুলো একইরকম নয়। আর তাই, সবার রুটিন এক হবে না এটাই স্বাভাবিক। তবু এখানে একটি খসড়া রুটিন সাজিয়ে দেয়া হল, যা আপনাকে প্রাথমিক ধারণা দিবে যে কোন কাজগুলোকে আপনার বানানো ব্যক্তিগত রুটিনে প্রাধান্য দেয়া উচিত, আর কোন কাজগুলোকে কম গুরুত্ব দেয়া উচিত।

👉 সাহরির জন্য উঠুন। যদি এসময় খেতে আপনার ভালো না লাগে, তাও উঠে পড়ুন। অল্প কিছু হলেও খেয়ে নিন বা পান করুন, যাতে প্রতি রাতে সাহরীর সুন্নাহ পালন করার প্রতিদান আপনি পেয়ে যান। কেননা সাহরীর মধ্যে আছে বারাকাহ। (সহীহ বুখারি, ১৯২৩)

👉 এই সময় চেষ্টা করুন দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করার যাতে রাতের শ্রেষ্ঠ অংশে – তিনভাগের শেষ ভাগে আপনি সালাত আদায়ের আর দুআ করার সাওয়াব অর্জন করতে পারেন। নিজের গুনাহর দিকে লক্ষ্য রেখে এই সময়টাকে ব্যবহার করুন এবং এরপর ইস্তিগফার করতে থাকুন। যারা রাতের এই সময়টায় ইবাদাতে রত থাকে, আল্লাহ স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন। (সূরা আলি ইমরান, আয়াত ১৭)

👉 প্রিয় ভাই, নিশ্চিত করে নিন যে কমপক্ষে ফজর আর ইশার সালাত আপনি মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করছেন। বেশিরভাগ মানুষেরই কাজের সময়ের সাথে এই দুই ওয়াক্তের কোন ঠোকাঠুকি যেহেতু লাগে না, অতএব এই দুই ওয়াক্তে জামাআতে সালাত আদায় করা সহজ। যদি এটা আপনি করতে পারেন, তাহলে আপনাকে পুরো রাত সালাতে দাঁড়িয়ে থাকার সাওয়াব দান করা হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ৬৫৬)

👉 নিশ্চিত করুন যাতে ফজরের সালাতের পর সকালের যিকর আর আসরের সালাতের পর বিকালের যিকর মিস না যায়।

👉 যেদিন কোন কাজের তাড়া নেই, সেদিন চেষ্টা করুন ফজরের সালাতের পর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকার এবং তিলাওয়াত ও যিকরে মশগুল থাকার। সূর্য ওঠার ১৫ মিনিট বা আরো কিছু পর আদায় করে নিন সালাতুদ দুহা। চাইলে সূর্য মাঝ আকাশে ওঠার ১০ মিনিট আগেও এই সালাতটা আদায় করে নিতে পারেন। যে ব্যক্তি এই সালাত আদায় করবে তাকে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ্ব ও উমরাহর সাওয়াব দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। (তিরমিযি, হাদিস ৫৮৬)

👉 প্রতিদিন কাজে বেরুবার আগে নিয়ত করুন যে, সময়গুলো আপনি কাজে লাগাবেন আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য হালাল সম্পদ উপার্জনে, যাতে করে দিনের প্রত্যেকটি মিনিটের জন্য আল্লাহ আপনাকে সাওয়াব লিখে দেন। ৯টা-৫টার চাকরিতে এই বিষয়টা নিশ্চিত করে নিন যে, এই সময়ের ভিতরে আপনার মুখ আল্লাহর যিকর থেকে সামান্য সময়ের জন্যই বিরতি পাবে। এটাও নিশ্চিত করুন যে সব ধরণের গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মাধ্যমে আপনার সাথে সাথে আপনার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোও সিয়াম পালনরত অবস্থায় আছে।

👉 ঘরে ফিরে এসে একটু বিশ্রাম নেবার পর একটা ঘণ্টা আল্লাহর কালাম তিলাওয়াতে বা এর অর্থ নিয়ে পড়াশোনায় উৎসর্গ করুন।

👉 ইফতারের আগের আধাঘণ্টা কাটান একনিষ্ঠ দুআর মধ্যে। কেননা পুরো রমাদানেই রোজাদারের দুআ কবুল হয়ে থাকে। (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস ৭৪৫০)

👉 মাগরিবের পর খাবারদাবার সেরে ইশার আগ পর্যন্ত সময়টুক শক্তভাবে কুরআন তিলাওয়াতে অতিবাহিত করুন।

👉 একদিনও যাতে তারাবিহ সালাত মিস না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। সেই মসজিদটাই বেছে নেন যেখানকার তিলাওয়াত আপনার অন্তরকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে।

👉 প্রতিদিন সাদাক্বাহ করুন। এজন্য আপনার জন্য সহজ, এমন একটি পরিমাণ ঠিক করে নিন। যদি কয়েকদিন ভুলে যাবার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে একটা দৈনিক খরচের পরিমাণ ঠিক করে নিন।

👉 প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটা ইলমি হালাক্বায় (বা মজলিসে) অংশগ্রহণের টার্গেট নির্ধারণ করে নিন। কেননা এইসব মজলিসে ফেরেশতাগণ আগমন করেন এবং এই মজলিসগুলোকে আল্লাহর রহমত চারপাশ থেকে ঘিরে থাকে।

👉 প্রতিদিন একজন আত্মীয়কে দাওয়াত দেওয়া বা তার বাসায় যাওয়ার টার্গেট সেট করুন। কেননা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা মানুষের হায়াতকে বাড়িয়ে দেয়, সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং জীবনের মন্দ সমাপ্তি থেকে তাকে রক্ষা করে। (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস ১২১৩)

সূত্র: ‘প্রোডাক্টিভ রামাদান‘ বই থেকে
লেখক: মুহাম্মাদ ফারিস, আলী হাম্মুদা

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *