কাজে বিক্ষিপ্ততা কমাবেন যেভাবে

আমরা প্রায়ই অভিযোগ করি, একটা কাজ করব করে করা হয় না। আবার কাজটা ধরলে শেষ করতে পারি না বা শেষ করতে পারলেও যেভাবে করতে চেয়েছিলাম, সেই মান বজায় রেখে করতে পারি না। মূলত মনোযোগের ঘাটতি এক্ষেত্রে প্রধান ঝামেলা পাকায়। আর মনোযোগ নষ্ট করতে ‘বিক্ষিপ্ততার’ ভূমিকা সবথেকে বেশি।

বিক্ষিপ্ততা আপনার মনোযোগকে নষ্ট না করলেও আপনার দক্ষতাকে স্বাভাবিকের চেয়ে কমিয়ে দেবে। তীক্ষ্ণ মনোযোগ বিকাশের জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার সমস্ত বিক্ষিপ্ততা দূর করতে হবে বা নিদেনপক্ষে কমিয়ে আনতে হবে।

সাধারণত আমরা দু ধরণের বিক্ষিপ্ততা দেখি:

👉🏼 অভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্ততা
👉🏼 বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা

আসুন, সংক্ষেপে একটা একটা করে দেখি, কীভাবে এগুলো তৈরি হয়:

ক. অভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্ততা

একটি চিন্তা নিয়ে আপনি কতবার ঘুরপাক খান? আপনি হয়ত ভাবছেন একটি ইমেলের উত্তর দেওয়া উচিত, কিন্তু কিছু সময় যেতেই বেমালুম ভুলে গেলেন। সম্ভবত আপনি ভাবছেন আপনার কাছে সময় আছে এবং পরে সেই কাজটি করতে পারবেন। কিন্তু সেই পরে আর হয়ে উঠে না। এভাবে অনেক কাজই আমরা ভাবি করব, কিন্তু পিছিয়ে ফেলি বা করলেও সুন্দরভাবে করতে পারি না।

মূলত আপনার অনর্থক ভাবনাগুলোই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু। বিশেষ করে আপনি যখন জটিল কোনো কাজ করেন, তখন আপনার এই অনর্থক ভাবনা হানা দেয়। যে কাজটা আসলেই করা দরকার সেটা বাদ দিয়ে অন্য সকল কাজ করার জন্য আপনি অজুহাত খুঁজতে থাকেন।

এই সমস্যা দূর করার একটি কার্যকর উপায় হলো, প্রতিদিন সকালের জন্য রুটিন করা এবং সেটি বাস্তবায়ন করা। এতে লাভ কী জানেন? এটি আপনার মনের অস্থিরতার মাত্রা কমাবে, আপনার মনকে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে ফোকাস করাবে।

দ্বিতীয়ত, যতভবে সম্ভব বিক্ষিপ্ততা এড়িয়ে চলুন। ফোন চেক করে, ইন্টারনেটে গিয়ে বা ভিডিও দেখে আপনার দিন শুরু করবেন না। কারণ, একবার আপনি এগুলোতে ডুবে গেলে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই ফোকাস করা কঠিন হয়ে যাবে। আপনার মন আপনাকে বলতে থাকবে, আপনি কঠিন কাজটা পরেও করতে পারবেন, এর চেয়ে আপনাকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ (এবং সহজ) কাজের দিকে নিয়ে যাবে।

খ. বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা

যেখানে অভ্যন্তরীণ বিক্ষিপ্ততা আপনার নিজের সৃষ্টি, সেখানে বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা আপনার বাহ্যিক পরিবেশের ফলাফল। বাঁধা এড়াতে আপনার বাহ্যিক পরিবেশকে যত বেশি অপ্টিমাইজ করবেন, আপনার মনোযোগ তত ভালো হবে। বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা ঘটিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করে:

🛑 ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন

🛑 বিভিন্ন জনের ফোনকল

🛑 অফিসের আড্ডাবাজ সহকর্মীরা

🛑 চারপাশের সাধারণ কোলাহল

🛑 একটি অসংগঠিত কর্মক্ষেত্র

আপনার পেশা অনুযায়ী এরকম বিভিন্ন বাহ্যিক কারণ পাবেন, যার ফলে আপনি বিক্ষিপ্ত হয়ে যান। কিন্তু আপনি ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত হলে মনোযোগ দেয়া অসম্ভব। বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা কমাতে, যতটা সম্ভব বাধা দূর করুন। উদাহরণস্বরূপ:

আপনি আপনার আসল কাজ করার জন্য সময় নিন এবং অন্যদেরকে জানান আপনাকে বিরক্ত না করতে। আপনি আপনার সহকর্মীদের আগে অফিসে পৌঁছাতে পারেন। অথবা, আপনি যদি বাড়িতে থেকে কাজ করেন, যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন আপনি কাজ করতে পারবেন।

উপরন্তু, আপনি, আপনার ফোনে যে নোটিফিকেশনই আসুক না কেন তা মুছে ফেলা নিশ্চিত করুন। এছাড়াও আপনার সহকর্মীদের দিনের নির্দিষ্ট সময়গুলোতে বিরক্ত না করতে বলুন। অথবা অন্যদের আপনি ব্যস্ত আছেন তা বোঝাতে হেডফোন পরুন।

আপনার উপর যেটাই কাজ করুক না কেন, যে কোনো মূল্যে বাহ্যিক বিক্ষিপ্ততা থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করুন। এইভাবে আপনি আপনার গভীর মনোযোগ বিকাশ করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: থিবো মেরিস রচিত পাওয়ারফুল ফোকাস বই অবলম্বনে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *