আমাকে একজন মেসেজে জিজ্ঞেস করলেন, আমার ছেলেটা ছোট। স্কুলে পড়ে। আমি কি ওকে মাদরাসায় পড়াব?
আমি তার জিজ্ঞাসা শুনে একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। কী বলব ভাবছিলাম। কারণ প্রশ্নের উত্তরটা আমার কাছে কিছুটা ভারী লাগছিল।
প্রথম বিষয় হলো, সন্তানকে আপনি কেন মাদরাসায় পড়াতে চান? এই প্রশ্নের উত্তরটা স্পষ্টভাবে আপনার জানা থাকতে হবে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, মাদরাসায় পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার রোজগার হালাল কিনা, আপনার বাসার পরিবেশ দ্বীন-বান্ধব কিনা এটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আবেগের বশে সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করালেন অথচ বাসার পরিবেশ পুরাই ভিন্ন রকম; সারাক্ষণই টিভিতে গানবাজনা চলে, পর্দার বালাই নাই, তাহলে দেখা যাবে সন্তান মাদরাসায় তো ভালো থাকবে কিন্তু বাসায় এসে বিগড়ে যাবে। বাসার পরিবেশ তাকে বেশি প্রভাবিত করবে এবং একটা সময় মাদরাসার পড়া তার ভালো লাগবে না। মাঝে কয়েকটা বছর অহেতুক নষ্ট।
তৃতীয়ত মাদরাসায় সন্তানকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বুঝতে হবে, এখানে পড়াশোনা করার দ্বারা দুনিয়ার বিত্ত অর্জন হবে না। স্কুল-কলেজে পড়ানোর দ্বারা অনেক সময় বাবা-মায়ের একটা স্বপ্ন থাকে, ছেলে ভালো সেলারির চাকরি করবে। টাকাপয়সা কামাবে। মাদরাসার পড়াশোনায় এমন স্বপ্ন না দেখাই ভালো। যদি কারও ক্ষেত্রে অর্জন হয় সেটা ভিন্ন কথা। ইন জেনারেলি এমনটা হয় না। খুব নরমালি জীবন হয়ে থাকে মাদরাসাপড়ুয়াদের। তো এসব নানান কথা মাথায় রেখে তারপর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি সত্যিই সন্তানকে মাদরাসায় পড়াতে চাচ্ছেন কিনা।
আমি বিশ্বাস করি, বিত্তবান মা-বাবা সন্তানকে স্কুলে না পড়িয়ে মাদরাসায় পড়ানোটা এক বিশাল কুরবানি। আপন সন্তানকে দ্বীনের জন্য ওয়াকফ করার মানসিকতা যদি থাকে এবং ঘরোয়াভাবে উপযুক্ত পরিবেশও যদি সন্তানকে দিতে পারেন তাহলে আপনার সন্তানকে মাদরাসায় পড়ানোর ব্যাপারে ভাবতে পারেন। নইলে না পড়ানোই মঙ্গলজনক মনে করি। কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এদের ক্ষেত্রে ‘না ঘর কা কা ঘট কা’ প্রবাদ বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। দুনিয়াবি শিক্ষায় ভালো শিক্ষিত বা দ্বীনি শিক্ষায় ভালো শিক্ষিত কোনোটাই হতে পারে না। অনেক সময় হিতে বিপরীত হতেও দেখা যায়। দু-কূল হারানোর ক্ষোভ এদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। অনেক সময় ধর্মবিদ্বেষীও বানিয়ে দেয়। অনলাইনে এমন অনেক কেস দেখেছি।
তো এখন কী করতে হবে? এর উত্তর সোজা। দুনিয়ার তাবৎ সন্তানকে মাদরাসায় পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি যদি এমন পরিবেশ আর মানসিকতা নিশ্চিত করতে না পারেন তাহলে ছেলেকে স্কুলেই পড়ান। তবে পাশাপাশি তার দ্বীনের জরুরি জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থাও করুন। ছেলেকে নামাজি বানান। কুরআনপাঠে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলুন। ধর্মের সাথে তার আত্মার বন্ধনকে সুদৃঢ় করুন। তাহলে সে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার যা-ই হবে, ধর্মের গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখবে। ইসলামকে ভালোবাসবে। সুযোগ পেলে সেও দ্বীনের খেদমত করবে। পর্দার পরিবেশওয়ালা হসপিটাল করবে, স্কুল-কলেজ ও পড়লে করার চান্স থাকত প্রতিষ্ঠা করবে। যা মাদরাসায়
তো সন্তান আপনার। সিদ্ধান্তও আপনার। তাকে আপনি কোথায় পড়াবেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাকে আপনি কী বানাবেন। মাদরাসায় পড়েও আপনার সন্তান দুনিয়াদার হতে পারে আবার স্কুল-কলেজে পড়েও দ্বীনদার হতে পারে। এই পার্থক্যটা বিচক্ষণতার মাধ্যমে আপনিই তার মধ্যে তৈরি করে দিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ওয়াজাহাত : মাদরাসা বলতে এখানে আমি কওমি মাদরাসা বুঝাচ্ছি।
জনপ্রিয় লেখক আব্দুল্লাহ আল মাসউদ এর ‘আলোর পিদিম‘ বই থেকে চয়িত।
সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক বই পেতে ক্লিক করুন: সন্তান প্রতিপালন
Leave a Reply to Marham Sumaiya Cancel reply