গান যেভাবে নিফাকি সৃষ্টি করে

গানের সুমধুর সুরে মুগ্ধতা কাজ করে আমাদের। গান ভালোবাসি আমরা অনেকেই, অনেকেই হয়তো প্রায়শই গুনগুনিয়ে ভাজতে থাকি একের পর এক গানের কলি। আজকাল তো মানুষ রীতিমতো গানবাজনার উপর গবেষণা পর্যন্ত করে, নিষ্ঠার সাথে গান গাওয়া থেকে নিয়ে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শিক্ষা করে। এই গান আর গানবাজনা নিয়ে সবকিছুর স্রষ্টা ও সব বিষয়ের রহস্য সম্পর্কে অবগত যে সত্তা, সেই মহান আল্লাহ কি বলেন একটু জেনে নেওয়া দরকার না?

আল্লাহ তাআলা বলেন,
“একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গুমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং আল্লাহর পথকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান ৩১:০৬)

মুফাসসিরীনে কিরামের মতে, এখানে “অবান্তর কথাবার্তা” শব্দযুগলের মাধ্যমে গানবাদ্যকে বোঝানো হয়েছে।

হাদীসেও গানের ব্যাপারে কড়া সতর্কবাণীই উচ্চারণ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “গানবাদ্য শ্রবণ করা কবীরা গুনাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসেকি আর এর দ্বারা আনন্দানুভব করা কুফরি।’ (আবু দাউদ : ৬৭৪)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “পানি যেমন ভূমিতে তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।” (বাইহাকী : ২১৫৩৬, ইগাসাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২)

গান মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে দেয়। গানের প্রতি ভালোবাসা কুরআনের প্রতি ভালোবাসাকে কমিয়ে দেয়। গানকে আল্লাহ অভিহিত করেছেন “শয়তানের আওয়াজ” হিসেবে। শয়তান আল্লাহর কাছে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে তার আওয়াজ দ্বারা এই কাজ করার অনুমতি দেন। দেখুন সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৬৪। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম মুফাসসির আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে, তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবি’ঈ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহর মতে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। (ইগাসাতুল লাহফান ১/১৯৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মাতের মাঝে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, পশম, মদ ও বাদ্য-যন্ত্রকে হালাল করে নেবে।’ (সহীহ আল-বুখারী: ৫৫৯০)

এই হাদীস থেকে সুস্পষ্ট যে, বাদ্যযন্ত্র হারাম এবং হারামে লিপ্ত হলে গুনাহগার আর হারামকে হালাল সাব্যস্ত যে করবে সে কুফরিতে লিপ্ত হবে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, গান হচ্ছে অন্তরের মদ। মদ যেমন মানুষের বুদ্ধি-বিবেক আচ্ছন্ন করে ফেলে, গানও ঠিক তেমনি মানুষের চিন্তাচেতনাকে বিকল করে দেয়। মানুষের মধ্যে গুনাহর প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। অন্তরকে নেশাসক্ত করে তোলে। গান অন্তরকে নিফাকের জন্য এমন এক উর্বর ভূমিতে পরিণত করে যে, মানুষ সাহাবায়ে কিরাম যে ইসলামের উপর আমল করেছেন সেই ইসলামকে মানুষ এই যুগে অচল মনে করতে থাকে। এরই ফলাফল দাঁড়ায় যে তারা হারামকে হালাল বানিয়ে দেয় যেমনটা উপরের হাদীসটিতে বলা হয়েছে।

ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি সবসময় গানবাজনায় মত্ত থাকে, তার অন্তরে মুনাফিকী সৃষ্টি হবে যদিও এর কোনো অনুভূতি তার মাঝে আসবে না।

গান মানুষকে কুরআন থেকে বিমুখ করে তোলে। কুরআন শুনতে তাদের ভালো লাগে না, বড় ভারী ভারী ঠেকে। কুরআনে তাদের অন্তর শীতল হয় না। কিন্তু গানের ফলে তাদের অন্তরে ভাবের সৃষ্টি হয় এবং তারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এজন্যই ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ মন্তব্য করেছেন, গান ও আল্লাহর কালাম কখনোই একই অন্তরে বসবাস করতে পারে না।

গানবাজনায় নিমগ্ন ব্যক্তির নামাযে অলসতা কাজ করে, বিশেষ করে জামাআতে নামায আদায়ের ব্যাপারে সে অলসতা প্রদর্শন করে। আর জামাআতে সালাত আদায়ে গড়িমসি করা হচ্ছে নিফাকের লক্ষণ। এভাবেই গান মানুষের মধ্যে বিভ্রমের সৃষ্টি করে মানুষকে নিফাকে পতিত করে।

আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক হওয়া উচিত। গানের বিষয়ে দ্বীনের বিধান ও এর অপকারিতার কথা মাথায় রেখে এ থেকে দ্রুত সরে আসাটা খুবই দরকার। যারা যারা আমরা গান শুনি, কম অথবা বেশি, চলুন আজকে থেকেই চেষ্টা শুরু করে দেই ইনশাআল্লাহ। গান থেকে দূরে থাকি, নিজে ভালো থাকি, অন্যকে ভালো রাখি এবং সর্বোপরি আল্লাহকে খুশি রাখি। আল্লাহ সহজ করে দিন। আমীন।

গান থেকে বের হয়ে আসতে যে বইগুলো পড়তে পারেন:

ইজ মিউজিক হালাল?
লেখক : ড. গওহর মুশতাক

গান কালের মরণব্যধি
লেখক : ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী

মিউজিক শয়তানের সুর
লেখক : শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল

ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাজনা
লেখক : মুফতী মুহাম্মাদ আল-আমীন

2 Comments

  • faisal munshi Posted September 23, 2022 5:56 PM

    what should I do if I am upset. I doesn’t want to read the Quran.

    • মহিউদ্দিন রূপম Posted October 1, 2022 1:39 PM

      আপনি যেহেতু শুনতে চাচ্ছেন না, আপনি কুরআন তিলাওয়াত শুনতে পারেন। ইউটিউবে ইমোশনাল, হৃদয়গ্রাহী অনেক তিলাওয়াত পাওয়া যায়, যেগুলো শুনলে মানসিক শক্তি মেলে এবং হতাশা কাটে।

Add Comment

Leave a Reply to মহিউদ্দিন রূপম Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *