পর্ন যেভাবে আপনার জীবন ধ্বংস করে

হাত বাড়ালেই অন্ধকার জগত। নীল বিষে নীলচে হয়ে যাবার হাতছানি। রাতের অন্ধকারে তার চেয়েও অন্ধকার আরেক জগতে হারিয়ে যাওয়া। উত্তেজনা, আনন্দের তুঙ্গে, তারপরই…চুপসে যাওয়া বেলুনের মতোই সব শেষ! বিছানায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা, কোনো কিছুতে স্বাদ না পাওয়া, জীবনের নির্মল আনন্দগুলো থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া, শরীর-স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া…আর কয়টা বলবো? বলতে শুরু করলে বলে যাওয়া যাবে অনর্গল। পর্ন এভাবেই শেষ করে দেয় আমাদের, গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেয় আমাদের অস্তিত্ব। আমরা হারিয়ে যাই, ক্রমাগত হারাতে থাকি নীলের দুনিয়ায়। প্রথমে একটু একটু আর পরে সাঁই সাঁই গতিতে আমরা ডুবে যেতে থাকি এক অন্তহীন ব্ল্যাকহোলে… 

পর্নোগ্রাফি একটা মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় করে দেয়। শেষ করে দেয় একেবারে গোড়া থেকে। এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে আমাদের দারুণ অস্বস্তি, কিন্তু এভাবে করেই গোটা একটা প্রজন্ম যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, অনেকেই যে এখন পড়ে আছে স্রেফ ছাইভস্ম হয়ে; তার কি কোনো খবর আছে আমাদের? 

পর্ন দেখার শুরুটা হয় আগ্রহ থেকে। অনেকে হয়তো জানেই না সে আসলে কীসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম কেমন কেমন লাগলেও এক সময় সে অভ্যস্ত হয়ে যায় ওইসব অসভ্যতায়। গা গুলিয়ে ওঠা যৌনতার দাপট আচ্ছন্ন করে ফেলে তার মগজকে, বরং সমস্ত দেহ আর মনকে। পর্নোগ্রাফি একইসাথে ধ্বংস করে আমাদের শরীর আর মনকে। পয়েন্ট বাই পয়েন্ট করে বলা যাক তাহলে।

১) পর্ন একটি কূলহীন সাগরের মতো

পর্ন দেখার সময় মাথার মধ্যে ডোপামিন আর অক্সিটোসিনের মতো কেমিক্যালগুলোর জোয়ার শুরু হয়ে যায়। এই কেমিক্যালগুলো আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। আর মানুষের স্বভাব হলো, সে বারবার তার আনন্দের উৎসে ফিরে যেতে চায়। এভাবে করে সৃষ্টি হয় এক সর্বনাশা লুপের। প্রথমবার যে পরিমাণ ডোপামিনের নিঃসরণ সুখ দিয়েছিল, পরেরবার সেটুকুতে কাজ হয় না। দরকার হয় আরো হাই ডোজের। এভাবে করে নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিক ভাবে আনন্দিত হবার ক্ষমতা। মানুষ তখন প্রবেশ করে বিকৃতির অতল গহ্বরে!

২) পর্ন সব খারাপির মূল

পর্নের অভিশাপের আরেকটি রূপ হলো হস্তমৈথুন। এটি এমন এক নোংরা অভ্যাস, যার ফলাফল ব্যক্তি আপনাকে তো শেষ করবেই, শেষ করবে আপনার সংসারকেও। হস্তমৈথুনে আসক্তি ধ্বংস করে দেয় মানুষের শরীরকে, ক্ষয় করে ফেলে শরীরের শক্তিকে। শেষ করে দেয় প্রোডাক্টিভিটি, শরীরকে বানিয়ে ফেলে অসুখ-বিসুখের আখড়া। আর যৌনজীবন? আপনার যৌনজীবনকে জাহান্নামে পরিণত করার জন্য এই এক হস্তমৈথুনই যথেষ্ট। অকাল বীর্যপাতের অভিশাপে অভিশপ্ত যৌনজীবনে আপনি কখনোই পারবেন না আপনার স্ত্রীকে সুখী করতে, যার ফলাফল সরাসরি গিয়ে পড়বে আপনার দাম্পত্যজীবনের ওপর। জীবন বিষিয়ে উঠবে, সুখ বিদায় নেবে সংসার থেকে।

৩) পর্ন আপনার শরীর নষ্ট করে

পর্ন দেখে দেখে হস্তমৈথুন যখন করছেন, তখন আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মহামূল্যবান টেস্টোস্টেরন। শিথিল হয়ে যাচ্ছে আপনার পেশী, সুগঠিত দেহ অবয়ব ভেঙে গিয়ে নরম হয়ে যাচ্ছে, ঝুলে পড়ছে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আর সাথে প্রস্টেট ক্যান্সারের মারাত্মক ঝুঁকি তো আছেই।

৪) পর্ন আপনার রুচি বিকৃতকারী

বিকৃত যৌনাচারের শিক্ষা দিচ্ছে পর্ন। তাতে ক্ষতি কী? এই বিকৃতি আপনার মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে আপনার সমাজে, আপনার পরিবারে। আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে তখন আশা করবেন পর্নের মতোই পারফরম্যান্স। যেটা আসলে অবাস্তব, নোংরা, কুরুচিপূর্ণ। কিন্তু পর্ন আপনাকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলবে যে এসব নিয়ে ভাববার সময় পাবেন না আপনি।\

৫) পর্ন মস্তিষ্কের কোষগুলো পাল্টে দেয়

পর্ন পাল্টে দেয় মস্তিষ্কের কোষগুলোকে। অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেয় আপনার অমিত সম্ভাবনা। পর্ন বা পর্ন দেখে হস্তমৈথুনে আসক্ত তরুণ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় তার সমস্ত উদ্যম। নষ্ট হয়ে যায় তার আত্মবিশ্বাস। জীবনের সবকিছুতে সে পিছিয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় ট্র্যাক থেকে। এভাবে একদিন সূর্যের মতো আলো ছড়ানো এক তরুণ পর্নের ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে যায় চিরতরে। পর্ন থেকে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় ডিপ্রেশনের, আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে অসামাজিকতা।

নাহ! আর পারা যাচ্ছে না। পর্ন যেভাবে আপনার জীবনকে ধ্বংস করে—এটা লেখার চেয়ে, পর্ন কীভাবে আপনার জীবনকে ধ্বংস করে না, এটা লেখা অনেক অনেক বেশি সোজা। কারণ হলো, এটা নিয়ে লেখার আসলে কিছু নেই আর পর্নের ধ্বংসযজ্ঞ লেখার কোনো শেষ নেই। পর্ন আপনার জীবনের প্রতিটি অংশকে এতো বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আপনার শরীর, আপনার মন, আপনার স্টুডেন্ট লাইফ, ফ্যামিলি লাইফ, সোশ্যাল লাইফ আর ক্যারিয়ারকে এতো বিশ্রীভাবে ধ্বসিয়ে দেবে যে তার বিস্তারিত বিবরণ লিখতে গেলে লেগে যাবে অনেক অনেক দিন। পর্ন আপনাকে তিলে তিলে শেষ করবে। এই লেখায় আমরা তাই এলোমেলো কয়েকটা বিষয় তুলে ধরতে চেষ্টা করলাম। বাস্তবতা কিন্তু এতো অল্পতেই সীমাবদ্ধ নয়। পর্নের ভয়াবহতা আর ক্ষতির মাত্রা এতো বেশি যে একটু ঘেঁটে দেখতে গেলে মনে হবে বোধহয় যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। 

গড়িয়েছে বহু সময়, এখনো কি আমরা তবে অজ্ঞানতা আর আদিমতার সেই অন্ধকারেই আটকে থাকবো? সব শেষ হয়ে যাবার আগেই কি মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে আসাটা খুব বেশি দরকার হয়ে পড়েছে না? অনেক তো হলো, এবার না হয় বেরিয়ে পড়া যাক বুক ভরে একটু তাজা হাওয়া টেনে নিতে। এবার না হয় বেরিয়েই পড়া যাক খোলা আকাশের নিচে, মুক্ত বাতাসের খোঁজে! 

পর্ন আসক্তি থেকে বাঁচতে যে বইগুলো আপনার জন্য সেরা গাইডবুক হতে পারে:

ঘুরে দাঁড়াও

মুক্ত বাতাসের খোঁজে ( ILMHOUSE)

দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর

আসক্তিকে না বলুন

2 Comments

  • নাজমুল Posted July 18, 2022 8:25 PM

    বিষয় টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

  • rayhan Posted July 18, 2022 11:04 PM

    Khub e upokari post

Add Comment

Leave a Reply to নাজমুল Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *