এ আমাদের এক বিশাল সমস্যা—পড়তে চাই, কিন্তু পারি না। কেউ আবার টুকটাক পারি, যা কিনা অনেকটা না পারারই নামান্তর। কারও জীবনে বই বলতে কেবলই স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই। একবার যদি পেরেছেন স্কুল-কলেজের গণ্ডিখানা পেরোতে, তবেই হয়েছে। আর জীবনে তারা বইমুখো হন না।
কেউ কেউ আবার আছেন পড়তে চান। তারা বোঝেন যে পড়া দরকার। কিন্তু বই হাতেই নিতে ইচ্ছা হয় না। আবার হাতে নিলে দু’এক পাতা উল্টানোর পর আর মন মানে না। হয় বইয়ের উপরেই মাথা রেখে ভুসভুস করে ঘুমিয়ে পড়েন, নয়তো বই একপাশে ফেলে রেখে অন্য কোনো কাজে, কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আরও এক শ্রেণী আছেন, যারা উপরের কারোর মতোই নন। তারা বই পড়তেন এক সময় অনেক, বইয়ের প্রতি টানেরও কোনো কমতি নেই; কিন্তু কেন জানি আজকাল বই পড়ার সেই অভ্যাসটায় বেশ অনেকখানি ছেদ পড়ে গেছে। হতে পারে সেটা জীবনের অনিবার্য বাস্তবতায়, হতে পারে অভ্যাসটা বই পড়া থেকে জায়গা বদলে অন্য কোথাও চলে গেছে। কিন্তু সেই অভ্যাসটাকে তারা আবারও জায়গামতো ফিরিয়ে আনতে চান, আবারও তারা খুব করে বইয়ে ডুবে যেতে চান।
এমন সবার জন্যই আজকের এই লেখাটি। চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু কৌশলের কথা যেগুলো ইনশাআল্লাহ পাল্টে দিতে পারে আপনার বই পড়ার বেহাল দশা, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি গড়ে তুলতে পারবেন বই পড়ার চমৎকার একটি অভ্যাস। আসুন, শুরু করা যাক। বেশি না, মাত্র তিনটি!
১) বইয়ের পাশে থাকুন
একটা মজার বিষয় শেয়ার করি আপনাদের সাথে। মানুষ যখন একটা পরিবেশের মধ্যে থাকে, তখন সে ওই পরিবেশের সাথে সচেতনভাবে ইন্টার্যাকশন না করলেও তার অজান্তেই একটা যোগাযোগ কিন্তু হয়ে যেতে থাকে। একটা সেতুবন্ধন গড়ে উঠতে থাকে। আর পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে সাড়া দিলে তো কথাই নেই কোনো! এজন্যই তো বলা হয় মানুষ তার পরিবেশের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। তাই বইয়ের আশেপাশে থাকুন। রুমের মধ্যে একটা জায়গায় বই জমিয়ে রাখুন বেশ ক’টা। বুকশেলফ থাকলে তো খুবই ভালো। না থাকলে অন্তত বইয়ের জন্য একটা জায়গা বরাদ্দ রাখুন। বই থাকে এমন সব জায়গায় যান, দেখবেন আপনার অজান্তেই বইয়ের সাথে আপনার একটা হৃদয়ের টান সৃষ্টি হচ্ছে।
২) শুরু করুন অল্প দিয়ে
এটা আসলে যেকোনো কিছু অভ্যাস করার ক্ষেত্রেই অনিবার্য একটি ধাপ। ভালো বলুন, মন্দ বলুন আপনাকে শুরু করতে হবে অল্প কিছু একটা দিয়ে। যাতে শুরুতেই মন চাপে না পড়ে যায়। মনকে সবসময় ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখতে হয়। তাকে বুঝাতে হয়, দেখো! তোমাকে কিন্তু আমি চাপে ফেলছি না, হু! এই নাও চকলেট। এভাবে মনকে শান্ত রেখে আপনার ইচ্ছামত পড়ুন। হতে পারে সেটা মাত্র এক প্যারা, হতে পারে পুরো একটি পৃষ্ঠা অথবা এক পাতা। আপনি নিজেকে নিজেই একটা সীমা বেঁধে দিতে পারেন যে এতোটুকু আমি পড়বোই। তবে নিজের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না কিন্তু!
৩) বেছে নিন ‘আপনার’ বই
এমন একটি বই বেছে নিন, যেটি হবে আপনারই জন্য। কিন্তু সেটা আবার কী? আচ্ছা, খোলাসা করেই বলি। ‘আপনার’ বই হচ্ছে সেই বই যেটার সাথে আপনি নিজেকে সহজে ‘কানেক্ট’ করতে পারেন। এমন কিছু যা পড়তে আপনার স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগে। হতে পারে আপনি গল্পের পোকা, হতে পারে আপনি ইতিহাসের ঘটনা জানতে ভালোবাসেন কিংবা হতে পারে জীবনঘনিষ্ঠ বা জীবনবোধ নিয়ে লেখা ঝরঝরে লেখাগুলো আপনাকে খুব টানে। এটা একটু ভেবে দেখলেই পেয়ে যাবেন আপনি। তবে আমাদের কাছে সাজেশন চাইলে আমরা আপনাকে শেষ অপশনটার কথাই বলবো। কারণ বেশিরভাগ মানুষকেই জীবনধর্মী লেখাগুলো খুব বেশিই কাছে টানে।
ব্যস, এইতো! অনেকের কাছেই মনে হতে পারে বা রে! এতো অল্পতেই হয়ে যাবে বুঝি? তাদেরকে বলি, জ্বি ইনশাআল্লাহ, হয়ে যাবে এতো অল্পতেই। শুধু যেটা করতে হবে, থামা যাবে না। এই তিনটি কৌশল বারবার প্রয়োগ করতে থাকুন, চালিয়ে যেতে থাকুন। দেখবেন বই পড়াটা সুড়ুৎ দিয়ে আপনার প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আর একবার যদি ঢুকে পড়তে পারে, তাহলে এরপরেরটা অনেক সোজা। এবার আপনি ইচ্ছামতো আপনার স্বাদ পরিবর্তন করুন, চাখতে থাকুন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের একের পর এক বই আর নিজের মধ্যে বাড়াতে থাকুন জগতের পর জগত। সৈয়দ মুজতবা আলীর বলা সেই মাছির উদাহরণটার মতো, নিজেই নিজের জন্য তৈরি করে নিন অনেকগুলো চোখ।
হ্যাপি রিডিং!
বই পড়ার অভ্যাস গড়তে যে বইগুলো আপনার সহায়ক হতে পারে:
কীভাবে পড়বেন?
লেখক : আব্দুল আজিজ বিন মুহাম্মাদ আস-সাদহান
বই পড়ি জীবন গড়ি
লেখক : আলি ইবনু মুহাম্মাদ আল ইমরান
পড়তে ভালোবাসি
লেখক : ড. রাগিব সারজানী
কী পড়বেন কীভাবে পড়বেন
লেখক : মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
Leave a Reply