জিন জাতি নিয়ে অজানা ১০টি প্রশ্নের উত্তর

জিন জাতি মানব-দৃষ্টির আড়ালে থাকে। তাই জিন জাতির অস্তিত্ব, পরিচয় নিয়ে আমাদের সংশয়ের শেষ নেই। আজ আমরা জিন নিয়ে দশটি কমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানব কুরআন হাদীসের আলোকে:

১) জিন কীসের তৈরি?

উত্তর: কুরআনে এসেছে, ‘আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন আগুন হতে।’ (সূরা আর-রহমান, ৫৫: ১৫) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে, জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন আগুনের শিখা থেকে, আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে (আল্লাহর কিতাবে) তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা থেকে।’

২) জিনদের কখন সৃষ্টি করা হয়েছে?

উত্তর: কুরআনে এসেছে, ‘আমি কালো শুষ্ক ঠনঠনে মাটির গাড়া থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছি। এর পূর্বে আমি জিনকে লেলিহান আগুন থেকে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা হিজর, ১৫: ২৫-২৭)

এ আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, জিনজাতিকে মানবজাতির আগে সৃষ্টি করা হয়েছে। পূর্বেকার কিছু আলিমের মতে তাদেরকে মানুষ সৃষ্টির এক হাজার বছর আগে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে কুরআন বা হাদীস থেকে এই তথ্যের সমর্থনে কিছু পাওয়া যায় না।

৩) জিনেরা কত প্রকার?

উত্তর: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জিন তিন প্রকার। এক প্রকার জিন বাতাসের মধ্য দিয়ে উড়ে বেড়ায়, আরেক প্রকারের জিন সাপ ও কুকুর, আরেক প্রকারের জিন বিভিন্ন জায়গায় থাকে এবং সফর করে বেড়ায়।’ (সহীহ আল জামিউস সগীর, খণ্ড৩, পৃষ্ঠ ৮৫)

৪) জিনদের আমরা দেখতে পাই না কেন?

উত্তর: কারণ, জিন শব্দের একটি মানে হচ্ছে লুকায়িত। তারা মানবদৃষ্টি থেকে লুকায়িত। আল্লাহ্‌ বলেন, ‘সে(অর্থাৎ শয়তান) ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে পায় যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না।’ (সূর আরাফ, ৭:২৭)

৫) জিনদের কারা দেখতে পায়?

উত্তর: জিনদের কিছু কিছু প্রাণী দেখতে পায়। যেমন কুকুর ও গাধা। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাতের বেলা কুকুর বা গাধার ডাক শুনলে শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কারণ, তারা এমন জিনিস দেখতে পায়, যা তোমরা দেখো না।’ (আহমাদ, ১৪২৮৩; আবূ দাউদ, ৫১০৩)

৬) জিনেরা কী খায়?

উত্তর: জিন ও তাদের মধ্যকার শয়তানেরা খাদ্য পানাহার করে। হাদীসে উল্লেখিত তাদের কিছু খাবার:
— হাড়, গোবর (সহীহ বুখারী)
— যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় না অথবা বাম হাতে খাওয়া হয় (মুসনাদে আহমাদ, ১৪৭২৯, ২৪৪৭৯)

৭) জিনেরা বিয়ে ও বংশবৃদ্ধি করে?

উত্তর: জিনেরা যৌনসঙ্গম করে থাকে। এর প্রমাণ হিসেবে আলিমগণ জান্নাতের সঙ্গিনী সংক্রান্ত আয়াতটি উল্লেখ করেন। যেখানে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন, ‘সেখানে থাকবে স্বামীর প্রতি দৃষ্টি সীমিতকারী মহিলাগণ, যাদেরকে ইতোপূর্বে স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ, না কোনো জিন।’ (সূরা আর-রহমান, ৫৫: ৫৬)

৮) ইবলিশ কি জিনদের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর: কুরআনে বিভিন্ন স্থানে ইবলিশ শয়তানের কথা এসেছে। আর সে জিনদের অন্তর্ভুক্ত। দেখুন, সূরা কাহাফ, ১৮: ৫০।

৯) জিনেরা কোথায় থাকে?

উত্তর: তাদের বেশিরভাগকে পাওয়া যায় ধ্বংসস্তূপ ও পরিত্যক্ত এলাকাগুলোতে। এছাড়া বিভিন্ন নাপাক জায়গায়, যেমন টয়লেট, ভাং এর আস্তানা, উটের আস্তাবল ইত্যাদিতে। এছাড়া কবরস্থানেও তাদের পাওয়া যায়। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেছেন, ‘যেসব লোক শয়তানের সাথে ঘনিষ্ঠ, তারা এসব জায়গায় থাকে।’

১০) জিনদের শক্তি সামর্থ্য কী কী?

উত্তর: জিনেরা অনেক কিছু করতে পারে। যেমন:
ক) অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলাচল করা, ভারী জিনিস উত্তোলন করা (সূরা ২৭: ৩৯-৪০)
খ) স্থাপত্য ও অন্যান্য কারুকাজে দক্ষতা (সূরা ৩৪: ১২-১৩)
গ) রূপ ধারণের ক্ষমতা (যেমন, বদর যুদ্ধে শয়তান মানুষের রূপে উপস্থিত হয়েছিল। দেখুন: সূরা ৮: ৪৮)
ঘ) মানুষের ধমনীতে রক্তের মতো প্রবাহিত হওয়া (বুখারী ৩০৪৮, মুসলিম ৫৪৯২)

তথ্যসূত্র: শাইখ ড. উমার সুলাইমান আল-আশকার এর জিন ও শয়তানের জগৎ বই থেকে সংক্ষিপ্ত। জিন ও শয়তানের জগৎ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এবং তাদের অনিষ্ঠ থেকে বাঁচতে বইটি পড়ার অনুরোধ রইল।


by

Tags:

Comments

2 responses to “জিন জাতি নিয়ে অজানা ১০টি প্রশ্নের উত্তর”

  1. Shopnil Avatar
    Shopnil

    জানার আগ্রহ থেকে বলছি,
    আছছা জীণ যদি শয়তানেরই অন্তর্ভুক্ত হয়, (বা ইবলিস এর অনুসারী হয়), এবং,নাপাক খাদ্য খায়, আর বিভিন্ন নাপাক জায়গা যদি তাদের আবাসস্থল হয়,
    তাহলে আল্লাহ কেনো কুরআনুল কারীমে বলেছেন যে –
    আমি জীণ এবং মানবজাতিকে কেবল মাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।
    যদি একটু পুরো বিষয় টা জানাতেন…. আমি ভালো ভাবে সব তথ্যগুলি জানি না

    1. মহিউদ্দিন রূপম Avatar
      মহিউদ্দিন রূপম

      এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্লগে উল্লেখিত বইতেই আলোচনা করা হয়েছে। বইটি পড়ার অনুরোধ রইল: জিন ও শয়তানের জগৎ

Leave a Reply to Shopnil Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *