দুশ্চিন্তা দূর করতে ইবাদত

দুশ্চিন্তা কমাতে বেশি বেশি ইবাদত খুব কাজের। কেন জানেন?

প্রথমত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তি যখন নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করে, তখন তার লক্ষ্য থাকে কেবল আল্লাহর কাছ থেকে পুরষ্কার নেওয়া। এ সময় ব্যক্তির ধ্যান জ্ঞান সব এক দিকে নিবদ্ধ থাকে। জগতের সবাইকে পায়ে ঠেলে দিয়ে মনকে বানায় রবের সাথে লাগোয়া। কারণ, সে জানে, ‘আল্লাহ্‌ তাআলা গাফেল মনের দুআ কবুল করবেন না।’ দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ কিন্তু এই বিক্ষিপ্ত মন, জটলা পাকা চিন্তাজগত। প্রতিবার আপনি যখন কোনো আমল করেন, একটি করে জটলা খুলতে থাকে এবং নতুন রাস্তা তৈরি হয়। এই রাস্তা একদিকেই চলমান। আমলের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে রাস্তাও হয় গভীর থেকে গভীর। এই পথ ধরে চলতে চলতে একসময় দেখবেন, আপনার সব চিন্তা আল্লাহর সাথে জুড়ে গেছে এবং জাপটে ধরা নেতিবাচক বিষয়গুলো কোথায় যে উবে গেছে, বুঝতেও পারবেন না।

দ্বিতীয়ত, মানুষ অনিশ্চয়তায় ভোগে, সন্দিহান থাকে। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাআলা এর বিপরীত। তাঁর পথ যেমন সুনিশ্চিত, তাঁর অনুশাসনও আপনার সাধ্যের ভিতর। হাদীসে এসেছে:

‘আল্লাহ্‌ তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব ও সম্পদের দিকে তাকান না। তিনি তাকান তোমাদের অন্তরের দিকে, তোমাদের আমলগুলোর দিকে।’ (সহীহ মুসলিম, ৬২২১)

মানুষ এর উল্টো। তাদের স্বভাব, আপনার অবয়ব, জাতিসত্তা দেখে তারা আপনাকে বিচার করবে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে ভালোবাসবে কিংবা ঘৃণা করবে। কখনও-বা এমন কিছুর ওপর নির্ভর করবে, যা কিনা মোটেও আপনার সাধ্যের মধ্যে নেই। তাছাড়া যারা এখন ভালোবাসছে, তারাও রাতারাতি পালটে যেতে সক্ষম। আপনি বুঝতেও পারবেন না, কী চলছে তাদের ভিতর। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে এমনটা দেখবেন না। তাঁর কাজের কোনো রদবদল ঘটে না। তাই আমাদের জন্য বিষয়টি বড়ই স্বস্তির। কুরআন বলে:

‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সূরা রদ, ১৩: ১১)

অতএব আমরা যতক্ষণ আল্লাহর দাবীগুলো পূরণ করতে থাকব, ততক্ষণ তাঁর নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে থাকব, নিয়ামতের বারিধারা ঝরতে থাকবে আমাদের ওপর। সময়ে সময়ে মানুষের যেমন মেজাজ পালটায়, আল্লাহর বেলায় এমনটা হয় না। এই বাস্তবতা আমাদের জন্যই প্রশান্তিদায়ক।

তৃতীয়ত, আপনি চাইলেই দুশ্চিন্তা দূর করতে যে কোনো কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলতে পারেন। কিন্তু সেটা যদি হয় বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রভাবহীন? তাহলে দুশ্চিন্তা দূর হবার নয়। এই দিকে আল্লাহ্‌ ক্ষমতাসীন। তিনি যে কোনো অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম। তিনি কথা দিয়েছেন, যারা বেশি বেশি তাঁর ইবাদত করে, তাদের অবস্থা পরিবর্তন করে দেবেন। হাদীসে এসেছে:

‘যে ব্যক্তি আখিরাতকে চিন্তার একমাত্র বিষয় বানায়, আল্লাহ তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন, তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে গুছিয়ে দেবেন। দুনিয়াটা তখন তার কাছে নগণ্য মনে হবে। অন্যদিকে যে দুনিয়াকে চিন্তার একমাত্র বিষয় বানায়, আল্লাহ তার গরিবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজকর্ম এলোমেলো ও বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। তার তাকদীরে যা রয়েছে, দুনিয়াতে এর চাইতে একটুও বেশি পাবে না।’ (সুনান আত তিরমিযী, ২৪৬৫)

নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে আমরা সরাসরি আমাদের স্রষ্টার সাথে কথা বলতে পারি, যিনি গোটা বিশ্বের নিয়ন্ত্রক। এই আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে যে মানসিক প্রশান্তি মেলে, দুশ্চিন্তাগুলো যেভাবে কেটে যায়, সত্যি বিস্ময়কর। আমাদেরকে দেয়া নবী রাসূলদের সেরা উপহার এটি। কাজেই যে এই উপহারের সদ্ব্যবহার করছে না, সে অনেক বড় কিছু হারাচ্ছে।

  • মূল লেখা: ড. সাদী আল-ইলমাসরি
  • ভাবানুবাদ: মহিউদ্দিন রূপম

মানসিক প্রশান্তি পেতে এই লিংকের বইগুলোও সংগ্রহে রাখতে পারেন: দুশ্চিন্তা দূরকারী বই

Add Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *