খিলাফত হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে দোর্দণ্ড প্রতাপে সুদীর্ঘকাল টিকে থাকা একমাত্র শাসনব্যবস্থা। আসমানী বিধানের নির্দেশনায় পরিচালিত এই শাসনব্যবস্থার অধীনে পৃথিবী কাটিয়েছে প্রায় ১৩০০ বছর! শান্তি, শৃঙ্খলা, ইনসাফ আর মর্যাদার এই শাসন বিশ্ববাসীকে চিনিয়ে দিয়েছে অফুরান আলোর বাতিঘর। দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিয়েছে ইসলামের আলো, দাঁড়িয়েছে মজলুম মানুষের বন্ধু হয়ে, আল্লাহর যমীনে কায়েম করেছে আল্লাহর দেওয়া বিধান।
এই অনন্য শাসনব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল খুলাফায়ে রাশিদার বরকতময় শাসনামল দিয়ে। এরপর এই অগ্রযাত্রায় একে একে শামিল হয় উমাইয়া, আব্বাসি ও উসমানি খিলাফাহর মতো শৌর্যবীর্যে বলীয়ান সব শাসনকাল। ইসলামের বিজয় নিশান নিয়ে মুসলিমরা ছড়িয়ে পড়েন বিশ্বের নানান ভূখণ্ডে, ইসলামের সুশীতল ছায়ায় দলে দলে আশ্রয় নিতে থাকে সেসব অঞ্চলের জনগণ। প্রসার ঘটে ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞানের, বাগদাদ পরবর্তীতে আন্দালুস হয়ে উঠে সেকালের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এই লম্বা সময়ের সবটুকুই ভালো কেটেছে, এমন নয়। এসেছে বিপর্যয়, হয়েছে পতন, অনেক শাসকই বেছে নিয়েছে যুলুমের পথ। কিন্তু উম্মাহ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, প্রত্যেক বিপর্যয়ের ছাই থেকেই সূচনা হয়েছে নতুন ভবিষ্যতের সূর্যোদয়ের। খিলাফতের ছায়াতলে একত্রিত হয়েছে মুসলিমরা, কখনো আবার দুর্ধর্ষ কোনো সালতানাতের ছায়াতলে জেগে উঠেছে এই অবিনাশী উম্মাহ।
গৌরবময় এই ইতিহাসের আনন্দ, বেদনা আর শিক্ষা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে, এগুলোর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে আরো একবার জাগরণের সূচনা করতে, আরো একবার তাদের অন্তরে খিলাফতের ভালোবাসা আর আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তুলতে আমাদের আজকের আয়োজন – খেলাফতের একাল সেকাল। আমরা আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব এমন ৬টি বইয়ের সাথে, যেগুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরবে মর্যাদার সেই শাসনব্যবস্থার সামগ্রিক ও বিস্তারিত এক চিত্র।
চার খলিফা সিরিজ (চার খলিফার জীবন ও শাসনব্যবস্থা)
খুলাফায়ে রাশিদা হচ্ছে আলোর সেই কাফেলা, যাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর দক্ষ হাতে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁর নববী মিশনকে। ইসলামের জ্যোতির্ময় আলোকধারা তাঁদের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বের আনাচেকানাচে। তাঁদের ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা আর আল্লাহভীরুতার গল্পগুলো কিংবদন্তির মতো শোনায়। পৃথিবীর সেরা এই মানুষগুলোর শাসনকাল সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত অফুরান আলোর স্নিগ্ধ উৎস হয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের সঠিক পথের দিশা। মুমিনদের সর্দার মহান এই চার খলিফার জীবন ও শাসনকালের বিস্তারিত ও বিশ্বস্ত ইতিহাসের পাঠ নিতে এই বিশেষ প্যাকেজের আয়োজন, যার মধ্যে থাকছে প্রত্যেকের জীবনী নিয়ে আলাদা আলাদা বই।
উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস (৫ খণ্ডে সমাপ্ত)
খুলাফায়ে রাশিদার পর ইসলামের সীমানাকে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত করেছিল যারা, তাঁরা হলেন উমাইয়া খিলাফতের খলিফারা। খায়রুল কুরুনের যুগে বিদ্যমান এই খিলাফাহ ইসলামের মানচিত্রকে বৃদ্ধিতে রাখেন অতুলনীয় ভূমিকা। পামির মালভূমি থেকে স্পেনের সবুজ উপত্যকা আর হিন্দুস্তান থেকে প্রায় সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলজুড়ে তাঁরাই ওড়ান ইসলামের বিজয় নিশান। তাঁদের ইতিহাসের বিস্তারিত খুঁটিনাটি নিয়েই ড. আলী আস-সাল্লাবি রচনা করেছেন ৫ খণ্ডের এই ইতিহাস গ্রন্থটি। ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণালি সেই সময়ের সত্য উপাখ্যানের স্বাদ নিতে এটিই হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত প্যাকেজ।
আব্বাসি খিলাফাহ
ইসলামী ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ ছিল আব্বাসি খিলাফাহর সময়কাল। সে সময় ইসলাম ভূখণ্ড ও জ্ঞানের রাজ্য, দুদিকেই বিস্তৃত হচ্ছিল দাপুটে ভঙ্গিতে। উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু ইসলামই ছিল তখন বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। দীর্ঘকাল যাবত মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে আসা এই খিলাফাহর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে মৌলিক বই উপহার দিয়েছেন মাওলানা ইমরান রাইহান। প্রাঞ্জল ভাষা, সহজ উপস্থাপনা আর শৈল্পিক আঙ্গিকে লেখা ইতিহাসের এই বইটিতে পাঠক পাবেন মুগ্ধতার আবেশ, সেই সাথে অবগত হবেন বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের চাঞ্চল্যকর এক অধ্যায় সম্পর্কে।
ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস
ছদ্মবেশী এক ইহুদি আচমকাই নিজেকে প্রতীক্ষিত ‘মাহদী’ বলে দাবি করে বসে। নিজেকে সে পরিচয় দেয় ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার বংশধর হিসেবে। এই প্রতারকের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় ফাতেমি সাম্রাজ্যের, উম্মাহর উপর যারা নিপীড়ন চালায় প্রায় তিন শতক যাবত। তাদের শাসনামলে প্রচারিত হতে থাকে রাফেযি ও কুফরি মতবাদ, ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে অন্যায়-অপরাধ, নির্যাতনের স্টীমরোলার চালানো হয় আহলুস সুন্নাহর নারী-শিশু-পুরুষদের উপর। আক্বসা বিজয়ী মহাবীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর হাতে এদের কবর রচিত হয়। এই যালিম সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ এই বইটির রচনা। শিয়া-রাফেযি ও বাতেনী সম্প্রদায়ের চক্রান্ত, রাজ্যশাসন, উত্তর আফ্রিকা থেকে রাফেযীদের মূলোৎপাটনে আহলুস সুন্নাহর আলিমদের ভূমিকা আর এদের নির্মূলে সুলতান নুরুদ্দিন মাহমুদ ও সুলতান আইয়ুবীর অসামান্য ভূমিকার আলোচনায় সমৃদ্ধ এই বই।
মামলুক সালতানাতের ইতিহাস
সময়টা তখন পতনের। আব্বাসি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত আছে নামমাত্র শাসক হয়ে। এই নাজুক সময়ে মুসলিম ভূমিতে ভয়াবহ তাণ্ডবের সূচনা করে নৃশংস তাতারি বাহিনী। তারা খিলাফাহ ধ্বংস করে, খলিফা সহ বিপুল সংখ্যক মুসলিমকে নির্মমভাবে হত্যা করে, গুড়িয়ে দেয় খিলাফাহর কেন্দ্র বাগদাদ। রক্তের স্রোত বইতে থাকে পুরো মুসলিম বিশ্বে। তারা এতোটাই অজেয় হয়ে ওঠে যে, লোকদের মনে বিশ্বাস জন্মে যায় তাদের কেউ হারাতে পারবে না। এই চরম সন্ধিক্ষণে আল্লাহ উত্থান ঘটান এমন একদল দুর্ধর্ষ সালতানাতের, যারা পাহাড়ের মতোই রুখে দেয় পঙ্গপালের মতো ধেয়ে আসা তাতারিদের বিজয়যাত্রার। আইন জালুতের প্রান্তরে তারা প্রমাণ করে দেয় তাতারিরা অজেয় নয়। মুসলিমদের ঢাল হয়ে তাতার অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করা সেই মামলুক সালতানাতের ইতিহাস নিয়েই চমৎকার এই বইটির রচনা। দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় বিজয়ের পথে উম্মাহর এই অগ্রযাত্রার ইতিহাস নিঃসন্দেহে আপনাকে উদ্বেলিত করে তুলবে বিজয়ের অনাবিল আনন্দে।
উসমানি খিলাফতের ইতিহাস (১ম-২য় খণ্ড)
খিলাফতের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে যে খিলাফত শাসন করেছে বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য, তার নাম উসমানি খিলাফত। দোর্দণ্ড প্রতাপে বিশ্ব শাসন করা এই খিলাফত টিকে ছিল প্রায় ৭০০ বছর! তাতারি ধ্বংসযজ্ঞের পর কীভাবে তাঁদের উত্থান ঘটলো, কীভাবে খিলাফতের নেতৃত্ব তাঁদের কাছে আসলো, আর কীভাবেই বা খিলাফতের পতন ঘটিয়ে সেক্যুলার ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হলো উম্মাহর উপরে—ইতিহাসের সেই আখ্যানটিই উঠে এসেছে দুই খণ্ডের এই গ্রন্থে। একইসাথে উঠে এসেছে উম্মাহর বিরুদ্ধে চালানো আরো অনেকগুলো ষড়যন্ত্রের বেদনাবিধুর বিবরণ।
Leave a Reply