গত বছরটা ছিল পাঠকদের জন্য বেশ উৎসবমুখর। নামজাদা বহু প্রকাশনী থেকে এসেছে নতুন নতুন বই। পাঠকদের উপচে পড়া ফরমায়েশ পেয়ে বহু বই দখল করে নিয়েছে আমাদের সাইটে বেস্ট সেলিং স্থান। নতুন বছরের শুরুতে আসুন আমরা জেনে নিই ডিসেম্বর মাসের বেস্ট সেলিং স্থানে ছিল।
নিচে ডিসেম্বরের ২০টি বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকা দেওয়া হলো। দেখুন তো সবগুলো আপনার সংগ্রহে আছে কিনা:
১) তাদাব্বুরে কুরআন (কুরআন বোঝার রাজপথে আপনার প্রথম স্বপ্নযাত্রা)
কুরআনকে ভালোবাসেন এমন অনেক পাঠক আফসোস করেন, আমি কেন কুরআনের মুগ্ধতা অনুভব করতে পারি না, কুরআন কেন আমার অন্তরে রেখাপাত করে না, কুরআনের অর্থ আমার মনে কেন মধুর হয়ে বাজে না। কেন? কখনো ভেবে দেখেছেন, কেন এমন হয়?
আসলে কুরআন বোঝা এবং কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করার অভাবেই এমন হয়। পুরো কুরআনকে কিংবা প্রতিটি সুরায় আলোচিত বিষয়বস্তুগুলোকে আমরা একনজরে দেখতে পাই না; প্রতিটি সুরার নাম, লক্ষ্য, আলোচ্য বিষয়াদি, আলোচনার বিন্যাস ও ধারাবাহিকতার কোনো সংক্ষিপ্ত মানচিত্র আমাদের স্মৃতিতে নেই। তাই আমরা কুরআনকে বুঝতে পারি না।
এই অভাবকে পূরণ করতে আপনাদের প্রিয় প্রকাশনী রুহামার ব্যতিক্রমধর্মী এক উপহার, প্রখ্যাত কুরআন-গবেষক শাইখ আদিল মুহাম্মদ খলিলের অসাধারণ রচনা “তাদাব্বুরে কুরআন কুরআন বোঝার রাজপথে আপনার প্রথম স্বপ্নযাত্রা।’ এই বইতে সুরা ফাতিহা থেকে সুরা নাস পর্যন্ত প্রতিটি সুরা নিয়ে মোট আটটি পয়েন্টে আলোচনা করা হয়েছে। এই মূল্যবান আলোচনাগুলো আপনার হৃদয়ে ১১৪ সুরার একটি সরল ও সহজ মানচিত্র তৈরি করে দেবে ইনশাআল্লাহ।
২) তোমাকেই বলছি
জনপ্রিয় লেখক তোয়াহা আকবরের লেখকের বেস্ট সেলিং বই ছিল “উল্টো নির্ণয়” ছিল নিজের স্রষ্টাকে চেনার কথা নিয়ে। আর “কে উনি?” লেখা হয়েছিল স্রষ্টার সর্বশেষ সত্য বার্তাবাহককে যুক্তি-প্রমাণসহ চিনে নেয়ার জন্য। আর নতুন বই “তোমাকেই বলছি” হচ্ছে সেই স্রষ্টা এবং তাঁর প্রেরিত বার্তা ও বার্তাবাহকের সাথে নিজের পরিচয়কে খুঁজে নেয়া, নিজের সত্তাকে বুঝে নেয়া, নিজেকে চিনে নেয়ার সুদীর্ঘ পথচলার সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া কিছু নুড়িপাথরের কথা।
৩) ইলা মাগফিরাহ
এর প্রথম অংশে লেখক পুরো কুরআনে আসা মাগফিরাত, তাওবাহ ও ইস্তিগফার সংক্রান্ত সকল আয়াত, আয়াতের অর্থ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির সুরার বিন্যাস অনুসারে একত্রিত করেছেন। দ্বিতীয় অংশে মাগফিরাত, তাওবাহ ও ইস্তিগফারের সংজ্ঞা, ফজিলত ও মাগফিরাত, তাওবাহ ও ইস্তিগফার বিষয়ের হাদিস ও বিভিন্ন বাণী একত্রিত করেছেন। মোটকথা, এই বইতে পাঠক পাবেন তাওবাহ-ইস্তিগফার ও মাগফিরাতের এক অনাবিল ঝর্ণাধারা।
কোরআনে নানাভাবে আমাদের চারপাশের বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো যেভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে যে কেউ মানতে বাধ্য হবেন যে, কোরআন আসলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য প্রেরিত এক মহাগ্রন্থ। বিশেষ করে ভ্রূণত্তত্ব, মেডিকেল সাইন্স, ছোট ছোট সূরাগুলোর গাণিতিক বিন্যাস ইত্যাদি কোরআনের বিস্ময়কর মুজিজারই প্রকাশ।
‘রহস্যময় কোরআন’ বইতে মানুষের ভ্রূণত্তত্ব, মেডিকেল সাইন্স, ছোট ছোট সূরাগুলোর গাণিতিক বিন্যাস, আয়াতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোড এবং কোরআনের আরও অনেক বিস্ময়কর মুজিজা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আমরা স্বামীরা প্রায়ই স্ত্রীদেরকে নিজেদের মতো করে বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু একজন স্ত্রী কি স্বামীর মতো খাপে খাপে নিজেকে গড়তে পারে? আল্লাহ তাআলা চাইলেই তো পারতেন হাওয়া (আ.)-কে ভিন্ন মাটি দিয়ে তৈরি করতে, যেভাবে আদম (আ.)-কে তৈরি করেছিলেন। সেটা না করে তিনি আদমের পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। কেন?
.
নারী-পুরুষের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। এ ভিন্নতার কারণও সৃষ্টি রহস্য। উভয়কে কিছু ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিটি স্বামীকে বুঝতে হবে, স্ত্রী কীভাবে চিন্তা করে, কী অনুভব করে, কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সুখময় জীবনের জন্য এগুলো জানা এবং উপলব্ধি করা, একে বিবেচনায় নেয়া এবং এর প্রতি দৃষ্টিপাত করা জরুরী। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার এ ভিন্নতা ত্রুটি নয়, বরং এটা জীবন ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা। ‘অনলি ফর ম্যান’ বইটি শুধু পুরুষের জন্য রচিত। তবে নারী-পুরুষের স্বভাবগত ভিন্নতার ব্যাখ্যাও এখানে দেয়া হয়েছে সুনিপুণভাবে।
এই বইয়ের প্রতিটি পাতা একজন মুসলিম নারীকে উদ্বুদ্ধ করবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে। যেন সময়ের স্রোত ও প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে প্রতিটি সত্যানুসন্ধানী মুক্তিকামী নারী দিশা পায় সরল ও সুষ্পষ্ট পথের। এর মাধ্যমেই তার সামনে পরিষ্কারভাবে দৃশ্যায়িত হয় জীবনের প্রতিটি মাইলফলক। বইটি প্রত্যেক মুসলিম নারীর জন্য আলোকিত জীবনের রঙিন দিগন্ত উন্মোচন করবে ইনশাআল্লাহ্।
ঈমান-জাগানী কাহিনী দিয়ে সাজানো এই বই। পুরো বই জুড়েই পাঠক উপলব্ধি করবেন, মুমিনের দুআ কখনও ভেস্তে যায় না। খুঁজে পাবেন যুগের সোনালী-প্রাপ্তি দর্পণে দাঁড়িয়ে নিজের সোনালী জীবন গড়ার হাতিয়ার, ইনশাআল্লাহ।
৮) ষোলো
বয়ঃসন্ধিকাল। অদ্ভূত এই বয়স! অনেকগুলো ফ্যাক্টরের সাথে বোঝাপড়া করতে হয় একটা ছেলেকে এই সময়। নিজের এবং বিপরীত লিঙ্গের শরীর, বাহিরের পৃথিবী নিয়ে অসীম কৌতূহলী মনে একঝাঁক প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন না বড়রা, যাদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল। কিশোর মন তখন উত্তর খুঁজে বেড়ায় ইচড়ে পাকা বন্ধুদের কাছে, ইন্টারনেটে। অধঃপতনের ব্যাকরণ লেখা শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই। শুধু সেই কিশোর বালকের না, অধঃপতনের ব্যাকরণ লেখা শুরু হয় একটা সমাজ, একটা দেশেরও।
এই অবহেলা, উপেক্ষা, অনাদারে ঘরের এককোণে নিজের শরীর, সমাজ আর পৃথিবীটাকে নিয়ে সঙ্কোচ ,দ্বিধায় ভোগা, হাজারো ভুল করা কিশোর-কিশোরীদের কাঁধে ভাই/বোন হয়ে হাত রাখতে এগিয়ে এসেছেন কিছু মহৎপ্রাণ মানুষ। তাঁরা বেশ কয়েকবছর ধরেই বয়ঃসন্ধিকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেবার চেষ্টা করছেন। উপেক্ষার শিকার বাংলাভাষী এই কিশোর-কিশোরীদের জন্য তাঁদেরই একটি প্রচেষ্টা এই ‘ষোলো ম্যাগাজিন’। ম্যাগাজিনটি থেকে ইনশাআল্লাহ্ বাংলাভাষী ‘ষোলো’রা অনেক উপকৃত হবে। তারা জীবনের ভুলগুলো চিনতে এবং সেগুলো শুধরে নেবার অনুপ্রেরণা, শক্তি সাহস পাবে।
সুখের সম্পর্কটা অর্থ-বিত্তের চাইতে মানসিকতার সাথে বেশি। গবেষণা বলে, মানসিকভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরাই বেশি সুখে আছে। অন্যদিকে মানসিক ভারসাম্য হারানোর ফলে পৃথিবীতে ঘটছে নানান বিশৃঙ্খলা। বাড়ছে আত্মহত্যা, ডিভোর্স, বিষণ্ণতার বোঝা।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লেখা ১৯৯৫ সালের বেস্ট সেলার বই Emotional Intelligence এই ক্ষেত্রে দারুণ। আবেগ কী, আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায়, ক্রোধ কেন কাজ করে এবং কীভাবে এটাতে দমন করতে হয়, আশা, সহানুভূতি, নেতিবাচক স্মৃতিগুলো ভুলার উপায়, মোটকথা মানসিকভাবে পোক্ত হবার জন্য একজন মানুষের যা যা প্রাথমিকভাবে জানা দরকার, বইটি এই চাহিদা পূরণ করবে। বিভিন্ন বাস্তব গল্পের আলোকে লেখক ড্যানিয়েল গোলম্যান বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কীভাবে আপনি হবেন একজন ‘ইমোশনালি ইনটেলিজেন্ট পার্সন’!
১০) আমার সারাদিন
আব্দুল্লাহ ও আমাতুল্লাহ দুজন ভাইবোন। একজনের বয়স আট, অন্যজনের বয়স সাত। ওরা দুজন সারাদিন কী কী করে সেই গল্পই শুনব আমরা।
ওরা অন্যদের মতো নয়। অযথা রাত জাগে না। মোবাইলে কার্টুন দেখে না। আজগুবি গল্পের বই পড়ে না। সকালে উঠেই অন্যদের মতো নাকমুখ গুঁজে পড়তে বসে না। এখনো ওদের পিঠে চেপে বসেনি ভারী স্কুলব্যাগ।
ওদের শৈশব আনন্দময়। এই আনন্দ শুরু হয় ফজরের সালাত দিয়ে। ভাইটি বাবার হাত ধরে মসজিদে যায় আর বোনটি আম্মুর সাথে সালাতে দাঁড়ায়। এরপর সারাদিন শুধু ছুটে বেড়ানো। কখনো বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যাওয়া, কখনো অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে যাওয়া, আবার কখনো পাশের বাড়িতে খাবার নিয়ে যাওয়া। এরই মাঝে বাড়িতে চলে আসে মেহমান! তখন তো আর কথাই নেই! ছোট ভাইবোনেরা একসাথে হওয়া মানেই নতুন নতুন খেলা!
এত আনন্দ আর ছুটোছুটির মাঝেও ওরা আল্লাহকে ভুলে যায় না। ওরা ভালোবাসে আল্লাহকে। তাই প্রতিটি কাজের আগে দুআ করে আল্লাহর কাছে। ওদের নিষ্পাপ মুখে উচ্চারিত হয় আল্লাহর নাম। তখন সারাদিনের সাধারণ কাজগুলোই হয়ে ওঠে একেকটি অসাধারণ গল্প।
আবদুল্লাহ আর আমাতুল্লাহ নিজেরাই বলছে ওদের সারাদিনের গল্প। আপনার সোনামণিকেও পরিচয় করিয়ে দিন ওদের সাথে।
বাকি ১০টি বই দেখতে ক্লিক করুন: Best Selling 20 Books in December 2021
Leave a Reply