দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি ঘটনা।
জার্মানদের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধের পর একজন সৈনিক তার অফিসারের কাছে নো ম্যান’স ল্যান্ড এলাকায় গিয়ে সহযোদ্ধার দেহ নিয়ে আসার অনুমতি চাইল। অফিসার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। বললেন, দেখো সে মরে গেছে। এখন তোমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার দেহ নিয়ে আসার দরকার কী?
কিন্তু সৈনিক তার অবস্থানে অনড়, ফলে একপর্যায়ে অফিসার তাকে অনুমতি দিলেন এবং কোম্পানিকে নির্দেশ দিলেন সৈন্যটি সহযোদ্ধার দেহ নিয়ে ফেরত আসা পর্যন্ত তাকে কাভার দিতে।
কয়েক মিনিট পর সৈন্যটি অক্ষত অবস্থায় ফিরে এল, তার কাঁধে সেই সহযোদ্ধার লাশ। অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নেওয়ায় কী লাভ হলো? বাঁচাতে তো আর পারলে না!
সৈন্যটি বলল, স্যার, আমি যখন তার কাছে পৌঁছলাম, দেখি সে তখনো বেঁচে আছে। আমাকে দেখে বলল, আমি জানতাম তুমি আসবে। সে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল এবং আমার কাঁধেই মারা গিয়েছে। লাভ এটুকুই।
ঈমান হলো এমনভাবে জানা, যখন বস্তুগতভাবে সঠিক হওয়ার তোয়াক্কা না করেও বিশ্বাসকে অটল রাখা যায়। ঈমান নিছক বাস্তববাদী দুনিয়ার বক্তব্যের মতো অন্ধভাবে বিশ্বাস করা নয়। ঈমান হলো বস্তুকে অতিক্রম করে এমন কিছু দেখতে পারা, যা সাদা চোখে দেখা যায় না বা বর্ণনা করা যায় না; কিন্তু হৃদয়ের চোখ দিয়ে পুরোপুরি অনুভব করা যায়।
বিশ্বাস অন্ধ নয়; এটি এমন কিছু দেখতে পায়—যা অবিশ্বাসীর সৌভাগ্যে জোটে না। ভালোবাসা, নিষ্ঠা, বিনাস্বার্থে করা সহযোগিতার লেন্স দিয়ে এটি দেখতে পায়। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই বিশ্বাস। বিশ্বাস তীব্র প্রচেষ্টায় হতাশার অন্ধকার রাস্তাকে আলোয় বিকরিত করে। কারণ, এটি জানে এই পথে সফলতা ও ব্যর্থতা মাইলের হিসাবে মাপা হয় না; বরং যিনি অন্তরের খোঁজ রাখেন, তাকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে উঠে দাঁড়ানো ও প্রচেষ্টা চালানোর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে এর আদ্যোপান্ত। যখন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখনও যে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, তার মুখের হাসিই পরম বিশ্বাস। কারণ, সে এমন কিছু শুনতে পেয়েছে। যা অন্যরা পায়নি।
সে যখন হাঁটে, অন্যরা থেমে গিয়ে তাকে দেখে এবং বিস্মিত হয়। তারপর ধীরে ধীরে তারাও ঘুরে দাঁড়ায়, দলে দলে তার সঙ্গে যোগ দিতে থাকে এবং এটি একটি কাফেলায় রূপ নেয়। তারা তাকে অনুসরণ করে। কারণ, এর মধ্যেই তারা জীবনের অর্থ এবং নিজেদের পরিপূর্ণতা খুঁজে পায়।
ইসলামের ভাষায় বিশ্বাস হলো ‘তাওয়াক্কুল’ বা নির্ভরতা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। তাকে তার ধারণাতীত উপায়ে রি দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক ৬৫: ২-৩)
আমার মতে বিশ্বাস একটি ডায়নামিক প্রসেস, যেখানে তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটে। এগুলো হলো:
- কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ করা।
- আল্লাহর নিয়ামাতের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া।
- আমাদের পাপ ও ভুলগুলোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা। একই সঙ্গে বিনীত আর্জির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য কামনা করা। কারণ একটাই, আমরা তাঁকে ভালোবাসি।
ওপরের লেখাগুলো ‘লিডারশিপ লেসন্স’ বই থেকে চয়িত। পাঠক নিশ্চয় অবাক হয়েছে গল্পটা পড়ে। এগুলো সত্য। বরং আরও অবাক হবেন আমাদের সালাফদের কথা পড়লে। তাদের কেউ কেউ তো বলতেন, ‘মুমিন যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করে, বিশ্বাস রাখে, সে পাহাড়ও নাড়িয়ে দিতে সক্ষম।’
বইটির লেখক: মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
বইটি নিতে ক্লিক করুন: লিডারশিপ লেসন্স
Leave a Reply