ওয়াইস আর-কারনী। ইতিহাসের এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্বভাব ছিল, তিনি অপরিচিত থাকতে পছন্দ করতেন। কোনো এলাকায় গিয়ে একবার খ্যাতি পেয়ে গেলে সেখানে আর থাকতেন না। আজকের যুগে খ্যাতির জন্য আমরা কী না করছি, কতভাবে বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করি! অথচ উনি অপ্রত্যাশিত খ্যাতিকেও অপছন্দ করতেন।
যাইহোক, দীর্ঘ বিরতি দিয়ে একবার এক এলাকায় গেলেন ওয়াইস আল-কারনী। এত বছর পর প্রিয় বন্ধুবরকে পেয়ে একজন অনুরোধ জানালো, ‘ভাইরে, মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে তো দেখাও করতে পারো! তাহলে সম্পর্কটা বজায় থাকে।’ ওয়াইস উত্তর দিলেন, ‘হয়ত। তবে এর চেয়েও উত্তমভাবে আমি তোমাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছি। আর তা হলো, তোমাদের অগোচরে আমি তোমাদের জন্য দুআ করি। সাক্ষাতের আনন্দ ফুরিয়ে যায়, কিন্তু দুআ প্রতিদান কখনও ফুরায় না।’[1]
ব্যস্ততার এই জীবনে আমরা অনেকের সঙ্গেই দেখা করতে পারি না। ছোটবেলার বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, দূরের, কাছের ভাই, অনেকেই থাকেন যাদের জন্য আমাদের মন কাঁদে, কিংবা যারা আমাদের প্রায়ই স্মরণ করে। কিন্তু কর্মব্যস্ততার ফলে চাইলেও সুযোগ বের করা যায় না। দেখা সাক্ষাৎ, খোঁজ খবর নেয়ার সময় মেলে না। তখন সম্পর্ক হালকা হয়ে আসে, ভাটা পড়ে। কখনও কখনও মনোমালিন্য, ঝগড়া বিবাদেও গড়ায়।
অন্য সব সম্পর্কের চাইতে আত্মীয়তার বন্ধন টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব একটু বেশি-ই। ইসলামে আত্মীয়তার বন্ধন ধরে রাখার ব্যাপারে জোরালো বিধান রয়েছে। হাদীসে এসেছে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।[2] এরকম সতর্কতামূলক হাদীসের সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
ব্যস্ততার ভিড়ে সবসময় দেখা করতে না পারলেও একটা কাজ কিন্তু আমরা সবাই করতে পারি। হ্যাঁ দুআ। একাধিক হাদীসে এসেছে: ‘কেউ যখন কারও অগোচরে তার জন্য দুআ করে, সেই দুআ কবুল হয়। উপস্থিত ফেরেশতারা দুআকারীর হয়ে বলে, ‘ও আল্লাহ্, এই দুআ কবুল করুন এবং সে তার ভাইয়ের জন্য যা যা বলেছে, অনুরূপ তার জন্যও করুন।’[3]
এর মানে এই নয়, আপনি দেখা সাক্ষাৎ একদমই বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু সময়ের অভাবে যাদের সাথে আপনি দেখা করতে পারছেন না বা ফোন দিতে পারছেন না, এরকম আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ভাই কি বোন, তাদের জন্য প্রাণ খুলে দুআ করুন।
অন্তত এই কাজটুকু করুন। তাহলে হঠাৎ কখনও দেখা হয়ে গেলে দুআর কথা বলে তাদের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারবেন। আল্লাহ্ আমাদের হালাল সম্পর্কগুলো সুন্দর রাখুক, সম্পর্কগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত করুক।
যে কোনো আত্মীয়তার বন্ধন টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব জানতে এই বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন-
‘সুন্দর সম্পর্ক: বিনিময়ে জান্নাত‘, আল্লামা ইবনুল-জাওযী (রহ.)
- তারিখু দিমাশক : ৯/৪৪৯, ইমাম ইবনু আসাকির
- সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৬; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০৯
- আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী (হাদীস ৬২৭)
Leave a Reply