রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; (তারা হলো,) ন্যায়পরায়ণ শাসক, সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে, সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোনো কুলকামিনী সুন্দরী আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন রাখে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তার বাম হাত পর্যন্তও তা জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার চোখযুগল অশ্রুসিক্ত হয় পানি।” [বুখারী (৬৬০, ১৪২৩, ৬৮০৬); মুসলিম (২৪২৭)]
.
ব্যাখ্যা
১) ন্যায়পরায়ণ শাসক
—মুসলিমদের বিষয়আশয়ে দায়িত্বরত প্রত্যেকই এর আওতাভুক্ত। ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী, অবিচার রোধকারী মাত্রই সে এই হাদীসের ভিতর পড়ে। কারণ, এটি উম্মতের সবার প্রত্যাশিত বিষয়। যালিমের হাত থেকে মাযলুমকে রক্ষা করা, মাযলুমের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, আল্লাহর বিধান কায়েম করা, সেই সাথে মানুষের আমানত, তাদের জীবন, ধনসম্পদ রক্ষা করা—সব কিছু এর ভিতর পড়ে।
.
২) আল্লাহর ইবাদতে বেড়ে উঠা যুবক
—তেজদীপ্ততা, কর্মতৎপরতা, প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ একটি বয়সের নাম যৌবনকাল। চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে পাপ জড়িয়ে পড়া যায় এ সময়। এজন্য এই বয়সে যে যুবক নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত রাখে, তাঁর নৈকট্য অর্জনে সদা তৎপর থাকে, আল্লাহকে রাগিয়ে দেয়—এমন সব পাপাচার, কামনাবাসনা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকে, এবং যৌবনের অস্থিরতা ও নফসের লাগামহীন বাসনা হতে নিজেকে যে রক্ষা করে, আল্লাহ তাআলা তাকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন।
.
৩) মসজিদের সাথে লটকে থাকে যার অন্তর
—মসজিদে লটকে থাকার অর্থ এই নয় ব্যক্তি বারে বারে মসজিদে যায়, কিংবা সেখানেই বেশিরভাগ সময় অবস্থান করে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে সালাত আদায় করতে সে তৎপর থাকে, সেখানে দুআর মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমতা অনুভব করে, তাঁর প্রতি বিনম্র হয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে। দুনিয়াবি স্বাদ আহ্লাদ তাকে মসজিদ থেকে দূরে রাখতে পারে না।
.
৪) আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হওয়া
—অর্থাৎ যে দুই ব্যক্তি স্রেফ আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, কোনো দুনিয়াবি সার্থকতার নেই। তারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য একত্র হয়েছে। আর তাই একজন আরেকজনকে নেক কাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে। দ্বীন ইসলাম এবং পাপাচারের ওপর অবিচলতা বিনা কোনো কিছু তাদের আলাদা করতে পারে না। তবে এ দ্বারা কেউ হারাম রিলেশনকে হালাল-জ্ঞান করবেন না। বেগানা নারী পুরুষের বন্ধুত্ব এখানে বোঝানো হয়নি।
.
৫) আল্লাহর ভয়ে নারীদের ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা
—এ এমন এক যুবক যাকে কোনো রূপসী, সম্পদশালী নারী নিজের দিকে আহ্বান করে, এসব দ্বারা তাকে ধোঁকায় ফেলে, এমনকি তাদের উভয়ের সামনে হয়ত পাপের সকল দরজা খুলে গেছে। কিন্তু এমতাবস্থায় সে যুবক ফিরে আসে, ফিরে আসে আল্লাহর ভয়ে। তাঁর শাস্তি ভয়ে সে ছেড়ে দেয়। দৃঢ় ঈমান আর উঁচু মনোবলের পরিচায়ক এটি। আর তাই, আল্লাহ তাআলা এমন যুবককে তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন।
.
৬) গোপনে দানকারী ব্যক্তি
—এ হলো এমন ব্যক্তি, যে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যয় করে। কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, শুধুমাত্র তাঁর জন্যই দান সদকা করে। না কারও কৃতজ্ঞতা চায়, না কোনো প্রতিদান। সে দান করে বলে বেড়ায় না, কাউকে খোঁটা দেয় না।
.
৭) নিভৃতে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
—এ এমন এক বান্দা, যে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী থাকে। তার ভিতর কপটতা নেই, সে করে না লোকদেখানী কাজ কারবার। একাকীত্বের সময় আল্লাহর বড়ত্বের চিন্তায় হারিয়ে যায় সে, তাঁর অবারিত রহমতে সিক্ত করে নিজের গোটা অস্তিত্বকে, এবং ছেড়ে দেয় চোখের অশ্রুধারা। তাঁকে খুশি করাই যেন তার সাফল্য, তাঁর ক্ষমা পাওয়াই যেন জীবনের লক্ষ্য। রবের ভয়ে তটস্থ থাকে এই বান্দা।
.
এ হলো সেই সাত শ্রেণির সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যাদের আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর ছায়া দেবেন। যেদিন সূর্য থাকবে সবচেয়ে কাছে, যেদিন জমিন হবে উদ্ভিদশূন্য, আর-রহমানের ছায়া ব্যতীত থাকবে না কোনো ছায়া। আমরা কি পারি না এই ছায়ায় আশ্রয় নিতে? সেই সাত জনের একজন হতে?
.
ব্যাখ্যার সূত্র: https://bit.ly/30EMj0k
ছায়ানুবাদ: Wafilife
Leave a Reply