গুনাহ মাফের জন্য তাওবাহ ইস্তিগফারের বিকল্প নেই। তবে কুরআন হাদীসে গুনাহ মাফের বহু আমলের কথাও এসেছে। উদাহরণস্বরূপ:
১) নামাজের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের কারও বাড়ির দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? এ ব্যাপারে তোমরা কি বলো?’ সাহাবীরা বললেন, ‘না, তার শরীরে কোনো ধরণের ময়লা থাকবে না।’ রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘এটিই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা সব পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন।’ [সহীহ বুখারী (৫২৮), মুসলিম (৬৬৭)]
২) মানুষকে ক্ষমা করা
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।’ [সূরা নূর, ২৪: ২২]
৩) নামাজ শেষে যিকর করা
নবীজি (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয) নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং একশত পূর্ণ করতে لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ-দাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল-হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়-ইন ক্বদীর’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।’ [রিয়াদুস সালেহীন (১৪২৭) মুসলিম (৫৯৭), আবূ দাউদ (১৫০৪)]
৪) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।’ [সূরা মুলক, ৬৭: ১২]
৫) কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়া
নবীজি (ﷺ) ‘তোমরা অবশ্যই কিয়ামুল লাইল আদায় করবে। কারণ, তা তোমাদের পূর্বের নেককার লোকদের অভ্যাস ছিল। তোমাদের রবের নৈকট্য লাভের মাধ্যম এটি। এ ছাড়া পাপ থেকে আত্মরক্ষার পথ এবং দেহের রোগব্যাধি দূরকারী।’[তিরমিযী, ৩৫৪৯; হাসান]
৬) নবীজির ওপর দুরুদ পাঠ করা
‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ এজন্য তার ওপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন, তার দশটি গুনাহ মোচন করবেন এবং দশটি দার’জাত (মর্যাদা) বাড়িয়ে দেবেন।’ [সহীহ আন-নাসাঈ, আলবানী (৪১৫)]
৭) রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুআ করা
‘মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন,” কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।”‘ [বুখারী (১১৪৫)]
৮) বিপদের সময় ধৈর্য ধরা
‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ্ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ [বুখারী (৫৬৪১), মুসলিম (২৫৭৩)]
৯) নফল রোজা রাখা
রাসূল (ﷺ)-কে আরাফার দিনে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দেয়।’ [মুসলিম (২৮০৪)]
১০) নেক মানুষদের সাথে বসা
‘এক দল ব্যক্তি যখন এমন কোনো মজলিসে বসে যেখানে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, সেই স্থান থেকে উঠার পূর্বেই তাদের বলা “দাঁড়াও, আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপরাশি মাফ করে দিয়েছেন। তোমাদের পাপগুলো নেক আমল দ্বারা পাল্টে দিয়েছেন।”‘ [সহীহ আল-জামী, আলবানী (৫৬১০)]
গুনাহ মাফের এরকম আরও উপায় জানতে পড়ুন:
গুনাহ মাফের উপায়
লেখক : শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
গুনাহ থেকে বাঁচুন
লেখক : শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ:
পাপ, তার শাস্তি ও মুক্তির উপায়
লেখক : আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
Leave a Reply