আল্লাহ তাআলা গোটা কুরআনকে বরকতময় করে নাজিল করেছেন। এর প্রতিটি হরফেই সাওয়াব। তাই ফাজায়েল বলতে গেলে বলতে হবে সমগ্র কুরআনই ফজিলপূর্ণ। এর প্রতিটি শিক্ষাই মানব জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপজীব্য। তবে কিছু কিছু সূরা রয়েছে, যা অন্য সবগুলো থেকে আলাদা মর্যাদা রাখে। তেমনি বেশ কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলোর ফজিলত নিয়ে স্বতন্ত্র বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আসুন এক নজরে সেসকল সূরা এবং আয়াতের ফজিলত জেনে নিই:
.
(১) সূরা ফাতিহা: সকল রোগের ঔষধ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম (এক স্থানে)। তখন এক বালিকা এসে বলল, ‘এখানকার গোত্রের সরদারকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ বাড়িতে নেই। আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন?’ তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালিকার সঙ্গে গেল। আমরা জানতাম না সে ঝাড়-ফুঁক জানে। ওখানে গিয়ে সে ঝাড়-ফুঁক করল এবং গোত্রের সরদার সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বকরী দান করেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করান। ফিরে আসার পথে আমারা জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জানো? (অথবা রাবীর সন্দেহ) তুমি কি আদৌ ঝাড়-ফুঁক করতে পারো?’ সে বলল, ‘না, আমি তো কেবল উম্মুল কিতাব—সূরা ফাতিহা—দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি।’ আমরা তখন বললাম, ‘যতক্ষণ না আমরা নবীজি (ﷺ)-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে জিজ্ঞেস করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না।’ এরপর আমরা মদিনায় পৌঁছে নবীজি (ﷺ)-এর কাছে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘সে কেমন করে জানলো তা (সূরা ফাতিহা) আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যও এক ভাগ রেখো।’ [বুখারী (৫০০৭), মুসলিম (২২০১)]
.
(২) সূরা বাকারা: জীন শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষার হাতিয়ার
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের ঘরসমূহকে কবর সদৃশ করে রেখো না (অর্থাৎ নফল সালাতসমূহ বাড়ীতে আদায় করবে)। কারণ, যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।’ [সহীহ মুসলিম (১৭০৯)]
নবীজি আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ [বুখারী (৫০০৯)]
.
(৩) সূরা আলে ইমরান: কিয়ামতের দিন মেঘ খণ্ড হয়ে আসবে
নাও্ওয়াস ইবনু সাম’আন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসূলুল্লাহ সূরা দু’টি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন, এ সূরা দু’টি দু’ খণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দু’টি কালো চাদরের মত ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মধ্যখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ দু’ ঝাঁক পাখীর আকারে আসবে এবং পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে। [মুসলিম (১৭৬১)]
.
(৪) যে সূরাগুলো নবীজিকে সবচেয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘সূরা হুদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, নাবা এবং সূরা তাকভীর আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে।’ [তিরমিযী (৩২৯৭) সহীহ]
.
(৫) সূরা বনী ইসরাইল এবং সূরা যুমার: নবীজির রাতের আমল
আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘নবীজি (ﷺ) সূরা যুমার এবং সূরা বনী ইসরাইল না পড়ে ঘুমাতেন না।’ [তিরমিযী, সিলসিলাহ সাহিহা (৬৪১), আলবানী]
.
(৬) সূরা কাহাফ: দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত (আরেক বর্ণনা অনুযায়ী শেষ দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে।’ [সিলসিলাহ সাহিহা (৫৮২), আলবানী]
আরেক হাদীসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নূর চমকাবে’ [সিলসিলাহ সাহিহা (৭৩৬), আলবানী]
.
(৭) সূরা মুলক্: ক্ষমা লাভের সূরা
নবীজি বলেন, ‘কুরআনে ৩০ আয়াতের একটি সূরা রয়েছে, এটি ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হবে। আর সেই সূরাটি হলো সূরা মুলক্।’ [তিরমিযী, সহীহ: আলবানী (২৩১৫)]
.
(৮) সূরা ওয়াকিয়া: ধনাঢ্যতা লাভের উপায়
‘যে ব্যক্তি সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, শেখা, তার নাম গাফেলদের তালিকায় লেখা হবে না, সে এবং তার পরিবার দরিদ্রতায় জর্জরিত হবে না।’ [সিলসিলা আহাদিস দ্বয়িফাহ (২৯১)]
.
(৯) সূরা হাশর: জান্নাত লাভের মাধ্যম
‘যে ব্যক্তি দিনে অথবা রাতে সূরা হাশরের শেষ আয়াত পড়বে, সে যদি সেদিন অথবা সে রাতে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য জান্নাত আবশ্যক।’ [(যইফ), যইফ আল-জামি আস-সাগীর (৫৭৭০)]
.
(১০) মুক্তি সোপান: সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম। তখন তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় আমাকে বললেন, বলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী বলব? তিনি বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) এবং মুআও’ওয়াযাতাইন (সূরা ফালাক, নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।” [তিরমিযী (৩৫৭৫) সনদ: হাসান]
Leave a Reply