চলছে বছরের শ্রেষ্ঠতম দশক। যিলহজ্বের এই মুবারক দিনগুলোর শেষ দিনটি অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্ব হচ্ছে ঈদুল আযহা, যাকে আমরা প্রচলিত ভাষায় কোরবানির ঈদ বলে থাকি। আল্লাহর জন্য পশু কোরবানি করা হচ্ছে ওই দিনটির শ্রেষ্ঠতম আমল। আল্লাহর জন্য কোরবানির এই আমলের মাধ্যমেই মহিমান্বিত হয়ে ওঠে ওই দিন। মুসলিম জাতির পিতা সাইয়্যিদিনা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাহকে জীবন্ত করে তোলা এই দিনটি সকল মুসলিমের জন্যই অত্যন্ত আনন্দের।
কোরবানি একটি ইবাদাত আর ইবাদাত মাত্রই রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। আল্লাহ তাঁর রাসূল ﷺ-এর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কোরবানি করতে হবে। ইবাদাতের এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই কোরবানি করা আবশ্যক। নয়তো আমাদের এই যবেহ করার মাধ্যমে ইবাদাত আদায় তো হবেই না, উল্টো অন্যায়ভাবে পশু হত্যার জন্য গুনাহর ভাগীদার হতে হবে।
আপনি কি জানেন কোরবানি করার সঠিক পদ্ধতিটি কী? জানেন কোরবানির পশুকে যবেহ করার সঠিক পন্থা? অজ্ঞতা কিংবা অসতর্কতার কারণে আপনার কোরবানি হারাম হয়ে যাবে না তো? তাই সতর্ক হোন এখন থেকেই। জেনে নিন কোন কোন ভুলের কারণে হারাম হয়ে যেতে পারে আপনার কোরবানি।
১। কোরবানি সহীহ হওয়ার জন্য একেবারে প্রথম শর্ত হলো, যবেহকারী মুসলিম ও সুস্থ হওয়া। এটা ছাড়া যবেহ শুদ্ধ হবে না।
২। দ্বিতীয়ত, যবেহ করার সময় অবশ্যই আল্লাহর নাম নিতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম না বলা হয়, তবে সেই কোরবানি হারাম হয়ে যাবে।
৩। যবেহ করার সঠিক পদ্ধতি হলো, পশুর শ্বাসনালী, খাদ্যনালী ও দুই শাহরগের অন্তত একটি কেটে দেওয়া যাতে করে রক্ত প্রবাহিত হয়ে যায়। যদি এই চারটি থেকে কেবল দুটি কাটা হয়, তবে সেই কোরবানি হারাম হয়ে যাবে।
৪। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে, যিনি যবেহ করছেন তিনি কোনো সমস্যায় পড়লে অপর কেউ এসে ছুরি ধরে এবং যবেহ সম্পন্ন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বিসমিল্লাহ বলতে শোনা যায় না। যদি প্রথম ব্যক্তির মাধ্যমে তিন খাদ্যনালী, শ্বাসনালী ও দুই শাহরগের অন্তত একটি কাটা না হয়, তাহলে তার মাধ্যমে যবেহ সম্পন্ন হয় না এবং সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় কেউ এসে যবেহ সম্পন্ন করলে তাকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলে নিতে হবে। নয়তো যবেহ হারাম হয়ে যাবে। ওই পশুর গোশত খাওয়া তখন হালাল হবে না।
৫। যবেহ করার পর ছুরি দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা এবং মেরুদণ্ডের সঙ্গে ঘাড় পর্যন্ত থাকা স্পাইনাল কর্ডের রগ কাটার চেষ্টা করা আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত একটি কাজ। স্পাইনাল কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পশুর দেহ থেকে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পশুটি রক্ত প্রবাহিত হয়ে নয়, বরং হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় আর তখন এটি শরীয়তসম্মত উপায়ে যবেহ না হয়ে হত্যা হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এটা তখন আর হালাল কোরবানি থাকে না, হারাম হয়ে যায়। হালালভাবে যবেহ সম্পন্ন করার জন্য অবশ্যই রক্ত যথাযথভাবে প্রবাহিত হতে দিতে হবে এবং এজন্য তিন নাম্বার পয়েন্টে বলা পদ্ধতিতে যবেহ করতে হবে।
এছাড়াও রক্ত পরিপূর্ণভাবে প্রবাহিত হওয়ার পরই চামড়া ছাড়ানোর কাজ শুরু করা উচিত। পশুর দেহ ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই চামড়া ছাড়াতে শুরু করাটা মাকরুহ। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই সমস্ত রক্ত প্রবাহিত হয়ে যায় এবং তখন চামড়া ছাড়ানো শুরু করা যায়। যবেহের আগে পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পাগুলো কিবলামুখী করে দেওয়া উচিত। যবেহকারী নিজেও কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ভালোমতো ধার করে নেওয়া ছুরি দিয়ে যবেহ করবেন। হাদীসে যবেহের ছুরি ধার করে নেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে করে পশুর কষ্ট না হয়।
তাই কোরবানির ইবাদাত আদায়ে সুন্নাহর অনুসরণ করুন। আপনার মূল্যবান কোরবানিকে হারামে পর্যবসিত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখুন।
Leave a Reply