সাহাবীদের জীবনী নিয়ে রাহনুমার ১৫টি বই

সাহাবীদের নিয়ে একঝাঁক বই

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত সাহাবীদের নিয়ে বললে অনেক কথাই বলা যায়। তার মধ্য থেকে একটা কথা হলো, তাঁরা ছিলেন এমন কিছু মানুষ, যাঁদের মতো কাউকে পৃথিবী আগে দেখেনি আর না পরেও কাউকে দেখবে। নবীদের পর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন তাঁরা। তাঁরা শিরক ও কুফরের আঁধার থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামকে কবুল করেছেন, নিজের সর্বস্ব দিয়ে ইসলামকে আঁকড়ে ধরেছেন এবং ইসলামের জন্য কুরবানি করে দিয়েছেন নিজেদের সম্পদ, বাড়িঘর, পরিবার, ক্যারিয়ার, এমনকি জীবনটাও পর্যন্ত। তাঁদের রক্তে, ঘামে, পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে ইসলামের মিনার, যার সুবিধা আমরা ভোগ করছি আজ পর্যন্ত। রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আজমা’ঈন!

সাহাবীদের অনন্য এই জীবনকে জানা আর দশটা গল্প-উপন্যাস পড়ার মতো হালকা বিষয় নয়। সাহাবীদের জীবনী যে আমরা শুধু চিত্তবিনোদন বা কাহিনীর মজা নেওয়ার জন্য পড়বো, এমনটা না কিন্তু। সাহাবীদের জীবনী জানার সাথে জড়িয়ে আছে দ্বীনকে গ্রহণ করে নেওয়ার মতো গুরুতর বিষয়। তাঁরা ছিলেন সেই জামা’আত, যাদের মধ্যে নাযিল হয়েছে আল্লাহর কালাম। যাঁরা ইসলামকে প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন সবচেয়ে বেশি অবদান। তাঁরা নিজ চোখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন, সরাসরি রাসূলের কাছ থেকেই দ্বীন শিখেছেন আর তাই তাঁরাই হচ্ছেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ প্রজন্ম, যাঁরা এই দ্বীনকে বুঝেছিলেন সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে ভালোভাবে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচতে হলে, দ্বীনকে গ্রহণ করতে হলে, দ্বীনকে মানতে হলে, কুরআন ও সুন্নাহর অবিকৃত, বিশুদ্ধ বুঝ গ্রহণ করতে হলে সাহাবীদেরকে জানার ও মানার কোনো বিকল্প নেই।

তাঁরা হচ্ছেন মাপকাঠি। দ্বীনের নামে প্রচলিত কোনো বুঝ যদি সাহাবীদের জামা’আতের বিপক্ষে যায়, তবে সে বুঝ পরিত্যাজ্য। তাঁরা ছিলেন রাসূলের সরাসরি ছাত্র, দ্বীনকে সবচেয়ে বেশি বুঝেছিলেন তাঁরাই। তাঁরা যে পথে চলেছেন, সেটাই ছিল রাসূলের পথ আর সেটাই ছিল আল্লাহর নির্দেশিত পথ। তাঁরাই হচ্ছেন দ্বীনের পথে চলার জন্য আমাদের সত্যিকারের অনুপ্রেরণা। আর তাই সাহাবীদের পবিত্র জীবনকথার মধ্যেই আছে আমাদের পথচলার মূল্যবান পাথেয়। কীভাবে কুরআন পড়তে হয়, কীভাবে কুরআনের উপর আমল করতে হয়, কীভাবে রাসূলের অনুসরণ করতে হয়, কীভাবে জাহিলিয়্যাতের সাগরে সাঁতার কেটে মুক্তির তীরে উঠতে হয়, কীভাবে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়—এই সবকিছুর পাঠ আছে সাহাবায়ে কেরামের জীবনে। তাঁদের জীবনী নিয়ে জানতে এই ক’টি বিষয়ই যথেষ্টের চেয়েও বেশি নয়?
শ্রেষ্ঠ এই মানুষগুলোর জীবনী নিয়ে পাঠকপ্রিয় প্রকাশন রাহনুমার আছে একঝাঁক বই। আছে শিশু-কিশোর সাহাবীদের জীবনী, আছে খুলাফায়ে রাশেদার প্রথম দুইজনের জীবনী, আছে নারী সাহাবীদের জীবনী, দুজন উম্মুল মুমিনীনের জীবনী। স্পেশাল বলতে গেলে আমাদের চেনাজানার বাইরে থাকা অনেক সাহাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া অসাধারণ একটি সংকলন ‘সাহাবায়ে কেরামের ঈমানদীপ্ত জীবন’। সাহাবীদের জীবনী নিয়ে অসাধারণ এই কালেকশনটির সাথে চলুন কিছুটা পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক।

১। সাহাবায়ে কেরামের ঈমানদীপ্ত জীবন

এই বইটি স্রেফ একটি বই নয়, এটা যেন সাহাবীদের বড়সড় এক আসর! আল্লাহর রাসূলের সাহাবীরা একেকজন যে একেকটা রত্ন ছিলেন, ইসলামের ছোঁয়ায় তাঁরা যে কি অসাধারণ একেকজন মানুষ হয়ে উঠেছিলেন, এই বইটি পড়লে সেই বিষয়টি আপনি তীব্রভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। বইটির দুই খণ্ডের প্রত্যেকটিতে ৫৪ জন করে সর্বমোট ১০৮ জন সাহাবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী উল্লেখ করা আছে। আজ যদি আপনার ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে, যদি ইবাদাতে জোশ না পান, তাহলে আপনার জন্য সাহাবীদের এই জীবনী সমগ্র এক মোক্ষম দাওয়াই! ড. আবদুর রহমান রাফাত পাশা রাহিমাহুল্লাহর অমর এই কীর্তির স্বাদে যে কত পাঠক মজেছেন, তার কোনো হিসেব নেই। সাহাবীদের জীবন ছিল মনের মধ্যে গেড়ে বসা ঈমানের উজ্জ্বলতম প্রতিচ্ছবি। আর তাই তাঁদের জীবনী পড়া মানে নিজের ঈমানটাকেই বুস্ট করে নেওয়া। চলুন, সাহাবীদের তাজা ঈমানের আসরে বসে তাজা করে নেই আমাদের ঈমান।

২। ওহীর সংবাদ ওরা জান্নাতী : হযরত আবু বকর রাযি.

শিশু-কিশোরদের সাথে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিদের পরিচয় ঘটানোর জন্য সুন্দর একটি কাজ আশারায়ে মুবাশশারা সিরিজ। এই সিরিজের প্রথম বইটি লেখা হয়েছে হযরত আবু বকর আস-সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে, যিনি নবীদের পর এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। গল্পভাষ্যে লেখা এই মহান মানুষটির জীবনী ইনশাআল্লাহ শিশু ও কিশোরদের কচি মনে ছাপ রেখে যাবে।

৩। ওহীর সংবাদ ওরা জান্নাতী : হযরত উমর রাযি.

আমীরুল মুমিনীন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জীবন আজও মানুষের কাছে বিস্ময়ের। তাঁর ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, আল্লাহর আনুগত্য ও যুলুমের বিরুদ্ধে তাঁর লৌহকঠিন অবস্থান আজও মানুষকে অভিভূত করে ফেলে। দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ এই মানুষটির জীবনী নিয়েই আশারা মুবাশশারা সিরিজের দ্বিতীয় বই লেখা। গল্পের সুন্দর ছন্দে উমরের সেই বিস্ময়কর জীবনের চিত্র খুব ভালোই এঁকে দিয়েছেন লেখক বইয়ের পাতায় পাতায়।

৪। গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা

তিনি ছিলেন সেই নারী, যাঁকে সালাম পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন! হ্যাঁ, আমরা বলছি উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা। তিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম স্ত্রী এবং বাকি সারাটা জীবন রাসূল যাঁকে কখনোই ভুলতে পারেননি। নবী হবার আগে ও পরে সবসময় তিনি রাসূলের পাশে থেকেছেন, তাঁকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে গিয়েছেন। দিয়েছেন সব রকমের সমর্থন। এই মহীয়সীর অনন্য জীবনের সুন্দর একটি চিত্রায়ণ উঠে এসেছে ‘গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা’ বইটির পাতায়। গল্পের আকারে খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে লেখা সুন্দর এই বইটি আমাদের চেনাবে কেমন ছিলেন মুমিনদের এই মা।

৫। সীরাতে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এমন এক মহীয়সী নারী ছিলেন, যিনি জীবিত স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন রাসূলের সর্বাধিক প্রিয় এবং রাসূলের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে যিনি হয়ে উঠেছিলেন এই উম্মাহর সবচেয়ে বড় জ্ঞানীদের একজন। তাঁর জীবনের প্রাথমিক অবস্থা, শিক্ষাদীক্ষা, দাম্পত্য জীবন,তাঁর বিপুল জ্ঞান ও ইলমের বিভিন্ন শাখায় তাঁর দক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে লেখা চমৎকার একটি বই ‘সীরাতে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা’। আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে তাঁর বিয়ের সময় বয়স সংক্রান্ত যে বিতর্ক করা হয়, সেটি নিয়েও খুব সুন্দর আলোচনা পাবেন বইটিতে। এ সংক্রান্ত সকল আপত্তির নিরসনও করা হয়েছে এই বইটিতে। শুধু নিরেট জীবনী নয়, বরং একইসাথে এই বইটিতে উঠে এসেছে বিশ্লেষণী কায়দায় জরুরি অনেক আলাপও। বিশেষ করে নারীদের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি বই।

৬। ফাতেমাতুয যাহরা : গল্প ও ইতিহাস

ফাতেমাতুয যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় কন্যা। জান্নাতি নারীদের সর্দার। তিনি ছিলেন এমন এক নারী, যিনি কিয়ামত পর্যন্ত সকল নারীদের আদর্শ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কেন তাঁকেই আল্লাহ নির্বাচন করলেন জান্নাতী নারীদের সর্দার হিসেবে? কি ছিল তাঁর যোগ্যতা? কেমন ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব? কেমন ছিল তাঁর চরিত্র মাধুর্য? এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর উঠে এসেছে ‘ফাতেমাতুয যাহরা : গল্প ও ইতিহাস’ বইটিতে। এ গল্প কাল্পনিক কোনো গল্প নয়। এ গল্প বাবা-মেয়ের মধুর সম্পর্কের, স্বামীর সংসারে নিবেদিতা এক নারীর, সন্তানদের নিবিড় যত্নে বড় করে তোলা এক মায়ের সর্বোপরি শ্রেষ্ঠতম প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ একজন নারীর গল্প।

৭। মরণজয়ী মহীয়সী

ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম নারীদের অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা আজও ইতিহাসে জ্বলজ্বলে। ইসলামের জন্য তাঁরা উৎসর্গ করেছেন তাঁদের সবকিছু। অকাতরে মেনে নিয়েছেন স্বামীর বিচ্ছেদ যাতনা, নির্দ্বিধায় সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন শাহাদাতের অমিয় সুধা পানে এবং প্রয়োজন পড়লে নিজেরাও অম্লান বদনে আল্লাহর তরে বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেদের জীবন। সেইসব অনন্যার প্রেরণাময়ী ইতিহাসের এক টুকরো উঠে এসেছে ‘মরণজয়ী মহীয়সী’ বইটিতে। ইসলামের জন্য তাঁদের ত্যাগ ও বীরত্বের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার ছোট্ট একটি নজরানা এই বইটি।

৮। মুসলিম নারীদের বীরত্বগাঁথা

ইসলামের জন্য মুসলিম পুরুষরা যেভাবে নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, ঠিক সেভাবেই বাজি রেখেছিলেন মুসলিম নারীরাও। নববী যুগ থেকেই ইসলামের জন্য নিজেদের রক্ত প্রবাহিত করেছেন তাঁরা। যুদ্ধের সময় প্রয়োজন পড়লে হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র, রুখে দিয়েছেন শত্রুদের, শাহাদার বরণও করেছেন। আল্লাহর দ্বীনের জন্য রক্তের নজরানা দিয়েছেন যেসব মহীয়সী, তাঁদের নিয়েই আয়োজন ‘মুসলিম নারীদের বীরত্বগাঁথা’।

৯। নারী সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবন

ড. আবদুর রহমান রাফাত পাশা রাহিমাহুল্লাহর আরো একটি চমৎকার বই ‘নারী সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবন’। আটজন মহীয়সী সাহাবিয়্যাহর পবিত্র জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণী তিনি এই বইটিতে তুলে এনেছেন। সাহাবীদের তাঁর এই গ্রন্থটিও সাড়া জাগিয়েছে পাঠক মহলে। মূল আরবির রস ও মান অনুবাদেও বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

১০। কিশোর সিরিজের ৬টি বই

গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে? শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে তো এই কথাটা আরো বেশি সত্য। গল্প শুনতে ও পড়তে দুটোতেই তাদের আগ্রহ প্রচুর। তাদের আগ্রহের এই জায়গাটাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই তাদের কাছে আমরা পৌঁছে দিতে পারি জীবন গড়ে দেওয়ার মতো অনিন্দ্যসুন্দর কিছু গল্প। রাহনুমা এমন ৬টি বই নিয়েই আলাদা প্যাকেজ তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে দুই খণ্ডের ‘প্রিয় নবীর হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরাম’, ‘সততার পুরস্কার’, ‘শেষ পরিণতি’, ‘ধৈর্য্যের মাঝেই সফলতা’, ‘আদর্শ মানুষের গল্প’। কিশোর সিরিজের এই বইগুলো আকারে ছোট, ভাষায় সরল ও উপস্থাপনাতেও সুন্দর। আমাদের শিশু-কিশোরদের মনন গঠনে, তাদের মনমানসে ইসলামের সৌন্দর্যকে গেঁথে দিতে এই বইগুলো অত্যন্ত উপকারি ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

রাহনুমার এই বইগুলো আমাদের সোনালি যুগের সোনালি মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিক, আমাদের মনে জাগিয়ে দিক তাঁদের মতো মুসলিম হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা—এই প্রত্যাশাতেই এই বইগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আল্লাহ আমাদের এই আকাঙ্ক্ষাকে কবুল করে নিন। আমীন।

সবগুলো বই একসাথে পেতে ক্লিক করুন: রাহনুমার সাহাবী সিরিজ


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *