মুসলিম হিসেবে আজ আমরা সেই আগের অবস্থানে নেই। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া এই আমরা আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাজিত, লাঞ্ছিত, বিধ্বস্ত। আমাদের দেখলে আজ বোঝার কোনো উপায় নেই আমাদেরই পূর্বসূরীদের হাতে রচিত হয়েছিল সভ্যতার বাতিঘর!
সভ্যতার বুননে ইসলামের সুতো খুঁজে পাওয়া যায় সর্বত্র। সুপ্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার অধীনে মুসলিম বিজ্ঞানীরা মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়। জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানী আর জ্ঞানহিতৈষী শাসকের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছিল নতুন জ্ঞান আর আবিষ্কারের সুবিশাল সম্ভার। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্যবিদ্যা, গণিত, অ্যারোনটিকস—এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবদানের সুবিধা আজও ভোগ করছে পুরো বিশ্ব। জ্ঞান-বিজ্ঞানের শহর বাগদাদ, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের উর্বর ভূমি আন্দালুসিয়া তথা মুসলিম স্পেনের বিভিন্ন শহর তখন থাকতো পুরো বিশ্ব থেকে আগত শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত।
কালের আবর্তনে ইসলামী শাসনের অপসারণের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই সমৃদ্ধ ধারাও। জ্ঞানের রাজ্যে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা মুসলিম জাতির পতন ঘটে, দ্বীন ও দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে যায়। এই সুযোগে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটায় পশ্চিমারা, সভ্যতায় মুসলিম অবদানকে লুকিয়ে ফেলতে সম্ভব সবকিছু করে তারা। আজ মুসলিম তরুণেরা জানে না কি সমৃদ্ধ এক সভ্যতার উত্তরসূরী তারা। পশ্চিমা অপপ্রচার তাদেরকে হীনম্মন্যতায় ভোগায়, তারা ভাবে সভ্যতায় মুসলিমদের কোনো অবদানই নেই। পৃথিবীর সমস্ত নেতিবাচকতার সাথে মুসলিমদের যুক্ত করা হয়। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞতায় ভোগা ও পশ্চিমা প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত মুসলিম তরুণ সমাজকে তাদের স্বর্ণালি ইতিহাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই আমরা আজ তুলে ধরবো এমন ৬টি বই, যেগুলোতে উঠে এসেছে সভ্যতার বিকাশে মুসলিম কীর্তির চমকপ্রদ বিবরণ।
সভ্যতায় মুসলিম অবদান
বিশ্বসভ্যতায় মুসলিমদের অবদান কতটুকু? কী কী আবিষ্কার, উদ্ভাবনের জন্ম হয়েছে মুসলিমদের হাত ধরে? আজকের প্রজন্ম এ সম্পর্কে বেখবর। ছেড়া ছেড়া কিছু তথ্য হয়তো জানে, কিন্তু জ্ঞানের যে বিশাল রাজ্য গড়ে তুলেছিল মুসলিমরা সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তাদের। সভ্যতার কারিগর হিসেবে মুসলিমদের অসামান্য সব কীর্তির কথা উঠে এসেছে বইটিতে। সাথে থাকছে উম্মাহর সংকট ও এ থেকে উত্তরণে মূল্যবান চিন্তার সমাবেশ।
ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাস
জাহিলিয়্যাহর ঘুটঘুটে আঁধারকে চিরে দিয়ে আলোর রোশনাই নিয়ে উদিত হয়েছিল ইসলামের সূর্য। জ্ঞানের আলোয় অজ্ঞতাকে দূর করে দিতে এসেছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নববী ইলমের এই নির্ঝরিণী থেকে অসংখ্য ধারা-উপধারায় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে জ্ঞানের সুধা, নবীজির মিশনকে জ্ঞানের বাহনে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দেন ইলমের সাধকরা। রাসূলের অধীনে প্রাথমিক যুগের জ্ঞানচর্চা ও পরবর্তীদের হাত ধরে সূচিত হওয়া ইলমি পাঠশালা সমূহের বিস্তারিত আলোচনা মিলবে এই বইতে।
ইসলামি সভ্যতায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস
একটা সময় বিশ্বজোড়া মুসলিমদের আধিপত্য ছিল। সে সময় জ্ঞানের রাজ্যে মুসলিমদের অগ্রগতি এতো বেশি ছিল যে, সেগুলো দেখলে আজও চোখ কপালে ওঠে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলিমদের নানামুখী অবদান আজ পর্যন্ত মেডিক্যাল সেক্টর উপকৃত হচ্ছে। এই শাস্ত্রের বিকাশে ইসলামের নির্দেশনা, অবদান ও মেডিক্যাল সাইন্সের বিভিন্ন ধারায় মুসলিমদের অবদান নিয়ে দারুণ এক ইতিহাসের সন্ধান পাঠক পেয়ে যাবেন এই বইটিতে।
মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার
এই বইটিকে বলা যায় শেকড়সন্ধানী ইতিহাসের সংকলন। সভ্যতার ইতিহাসে মুসলিম সভ্যতা যে অনন্য স্থান দখল করে আছে, সেটাকে মুছে ফেলার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি করেনি পশ্চিমা বিশ্ব। মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম বিকৃত করে, মধ্যযুগের স্বর্ণালি সময়কে অন্ধকার যুগ দেখিয়ে সূর্যের জ্যোতিকে নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বেহিসাব। এই বইটি সেই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি উদ্যোগ। মোট ৮টি অধ্যায়ে শতাধিক বিষয়ভিত্তিক শিরোনামে বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে মুসলিমদের ১০০১টি আবিষ্কার। বইটির গ্রহণযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এতে যুক্ত করা দুর্লভ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ছবি ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপির রেফারেন্স।
মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে (চার খণ্ড)
মুসলিমদের অজ্ঞ, মূর্খ এবং আরো অসংখ্য নেতিবাচক অভিধায় অভিহিত করতে ব্যস্ত সময় পার করে পশ্চিমা বিশ্ব। সারাক্ষণ এসব শুনে শুনে মুসলিম তরুণরাও ভাবে এই বিশ্বকে কী দিয়ে গেছে আমাদের পূর্বসূরীরা? এই প্রশ্নের জবাব মিলবে এই বইটির মধ্যে। মুসলিম জাতি বিশ্বকে কী-না উপহার দিয়েছে! ড. রাগিব সারজানি তথ্য ও যুক্তির মিশেলে বইটিতে তুলে ধরেছেন শ্রেষ্ঠতম এই জাতির নিখুঁত পরিচয়। সবিস্তারে তুলে ধরেছেন পৃথিবী ও মানবজাতির কল্যাণে মুসলিম জাতির উদ্ভাবন ও আবিষ্কার এবং কীর্তি ও অবদানের বয়ান।
বিশ্বসভ্যতা বিনির্মাণে মুসলমানদের অবদান
আজকাল ইতিহাসের একপাক্ষিক বয়ানে সভ্যতার হর্তাকর্তা বনে গেছে পশ্চিমের প্রতারকরা। বিশ্বসভ্যতা বিনির্মাণে মুসলিমদের অবদানকে হাপিশ করে দেওয়া গেছে সুচতুর হাতসাফাইয়ের মাধ্যমে। ইচ্ছেমতো বিকৃত করা হয়েছে ইতিহাসের সত্য বয়ানকে, যাতে করে বিশ্বসভ্যতায় মুসলিমদেরকে দেখানো যায় গরহাজির এক জাতি হিসেবে। তাদের এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টার জবাবে সভ্যতার কারিগর হিসেবে মুসলিমদের উজ্জ্বল অবদানকে স্পষ্ট করে তুলতেই এই বইটি প্রয়াস চালিয়েছে। দেখিয়েছে আমাদের সুপারহিরোরা কী পরিমাণ পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ আর পেশাদারিত্বে গড়ে তুলেছিলেন সভ্যতার সুউচ্চ প্রাসাদ।
Leave a Reply