অনেক ইতিহাসের ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিন। এই নাম, এই ভূমির সাথে আমাদের অন্তরের যোগাযোগ। এই ভূমিতেই যে আমাদের প্রথম কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের অবস্থান। এখান থেকেই সূচিত হয়েছিল মি’রাজের। পবিত্র এই মসজিদে সে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামতিতে নামায আদায় করেছিলেন সমস্ত নবী-রাসূল। এই ভূমি বরকতময়, পবিত্র। অসংখ্য নবী-রাসূলের পদচারণায় ধন্য এই ভূমি আর এখানকার অধিবাসী। 

উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাতে রক্তপাতহীনভাবে বিজিত হয়েছিল জেরুজালেম, তুলে দেওয়া হয়েছিল পবিত্র ভূমির চাবি। তারপর মুসলিমদের সুশাসনের অধীনে কেটে গেছে দীর্ঘসময়। এরপর এলো ক্রুসেডাররা, ঘোড়ার হাঁটু পর্যন্ত রক্তে ডুবিয়ে দখল করে নিলো পবিত্র এই শহর। দীর্ঘ ৮৮ বছরের দখলদারিত্ব আর যুলুমের অবসান ঘটলো মহাবীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর হাতে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনকে আগলে রেখেছিল মুসলিমরা, যতক্ষণ না দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় যায়নিস্ট আর তাদের আশ্রয়দাতা প্রতারক ব্রিটিশরা। পুরো বিশ্বে কলোনি বানিয়ে বসা ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনকেও দখল করে নেয়, বানায় নিজেদের কলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে এসে তারা প্রতিশ্রুতি দেয় স্বাধীনতার। কিন্তু চরম প্রতারক এই জাতি ফিলিস্তিনিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। ফিলিস্তিনকে ছেড়ে যায় রক্তপিপাসু যায়নিস্টদের হাতে। 

সেই থেকে ঝরছে রক্ত, ঝরছে একেবারে আজকের দিনটি পর্যন্ত। চলছে ধর্ষণ, লুটতরাজ, গুম, খুন, জবরদখল, বাজেয়াপ্তকরণ, বোমা মেরে, বুলডোজার চালিয়ে জনপদের পর জনপদ, বসতির পর বসতি গুড়িয়ে দেওয়ার এক মহোৎসব। ফিলিস্তিনের আজকের এই অবস্থার পেছনে আছে চরম বেদনাদায়ক এক ইতিহাস। আছে বৈশ্বিক চক্রান্ত, আরব নেতাদের ঔদাসীন্য, ফিলিস্তিনিদের সাথে অন্যদের বিশ্বাসঘাতকতা আর অবিরাম লড়াই-সংগ্রামের এক লম্বা ইতিহাস। ফিলিস্তিন অনেক ইতিহাসের সমষ্টি। ফিলিস্তিনকে আমরা চাইলেই ভুলে যেতে কিংবা এড়িয়ে যেতে পারবো না। ফিলিস্তিন মিশে আছে, মিশে থাকবে আমাদের রক্তে, মাংসে, অস্থিতে, হাড়েমজ্জায়। ফিলিস্তিন মুক্ত হোক, আবারো মুসলিমদের কাছে ফিরে যাক কুদসের পবিত্র ভূমি—এই কামনা আমাদের সবার। আর সেই কামনাকে সামনে রেখেই ফিলিস্তিনের সাথে জড়িয়ে থাকা ইতিহাসের পাতাগুলো ওল্টাতে ওয়াফিলাইফ আপনাদের জন্য নিয়ে এলো চারটি বিশেষ বইয়ের সম্ভার। 

কালের বিবর্তনে ফিলিস্তিনের ইতিহাস

মুসলিমদের অন্তরের সবচেয়ে বড় ক্ষত হয়ে আছে ফিলিস্তিনের উপর যায়নিস্ট দখলদারিত্ব। প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে, প্রতিনিয়ত ধ্বংসের তাণ্ডব চলছে। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু হওয়া প্রতারণা, রক্তপাত আর জবরদখলের ইতিহাস আজ পর্যন্ত অব্যাহত। কুদসের ভূমি আজ অবরুদ্ধ, আমাদের প্রথম কিবলা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। ফিলিস্তিন এই উম্মাহর চিন্তা ও আবেগের কেন্দ্রে আগেও ছিল, আজও আছে। ফিলিস্তিন সমস্যা স্রেফ কোনো ভূখণ্ডগত সমস্যা নয়, যেমনটা অনেকেই মনে করে থাকেন। ফিলিস্তিন আমাদের আক্বীদার অংশ। অসংখ্য নবীদের পবিত্র এই ভূমির বিষয়ে জানা, সচেতন থাকা, ব্যথিত হওয়া এবং এই ভূমিকে আবারো মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে আনার কাজে শামিল থাকা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ, সেই সচেতনতা থেকেই এই বইটির গ্রন্থনা। বইটিতে উঠে এসেছে ফিলিস্তিনের ইতিহাসের আলোকে ইসলামের ইতিহাস, এই ভূমির সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয় এবং ফিলিস্তিনের সঙ্কট। বরকতময় এই ভূমিকে জানুন, চিনুন আর শামিল হোন ফিলিস্তিন মুক্তির মিছিলে। 

ফিলিস্তিনের বুকে ইজরাইল

আজ অহর্নিশ আগুন জ্বলছে কুদসের ভূমিতে। বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্র ভূমি আজ শকুনের খপ্পরে। আজ ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে পানির মতো ঝরছে রক্ত, লুণ্ঠিত হচ্ছে মা-বোনের ইজ্জত, দেদারসে বন্দীত্ব বরণ করছে মুসলিম জনগণ আর ধ্বংস-বাজেয়াপ্ত-দখল হয়ে যাচ্ছে মুসলিমদের ঘরবাড়ি আর সম্পদ। নিজ ভূমি থেকেই আজ তারা বিতাড়িত, নিজ ভূমে আজ তারা পরবাসী। অথচ গল্পটা ছিল ভিন্ন! সারা পৃথিবীতে প্রত্যাখ্যাত ইহুদিদের তারা দিয়েছিল পবিত্র ভূমিতে ঠাঁই, আর সেই সুযোগে এই নবাগতরা দখল করে নিতে থাকে পবিত্র ভূমি, দাবি করে বসে নিজেদের মালিকানা। আরবদের অভ্যন্তরীণ দলাদলি আর বিলাসী, অকর্মণ্য আমির-উমারাদের উদাসীনতায় ইসরাইল নামের বিষফোঁড়া জেঁকে বসে ফিলিস্তিনের বুকে। তৈরি হয় নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাবার মতো করুণতম এক উপাখ্যান। এই বইটি ধারণ করে আছে সেই উপাখ্যানেরই প্রতিবিম্ব। 

মক্কা মদিনা জেরুজালেম

মক্কা, মদীনা আর জেরুজালেম। ইসলামের ইতিহাস তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসে এই তিন শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীন এই শহরগুলোর প্রত্যেকটির পেছনে আছে বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। আছে অনেক রহস্য, অনেক কৌতুহলী বিষয়। যেমন, কাবার খননকাজের সময় উদ্ধারকৃত শিলালিপিতে কি ছিল? কেন সেটার পড়ার জন্য একজন ইহুদির সাহায্য নিতে হলো? যমযম কূপ থেকে পাওয়া জিনিসগুলো কাদের ছিল? মদীনার আগের নাম ‘ইয়াসরিব’ কবে থেকে ছিল আর কেনোই বা ছিল? মক্কা-মদীনার বিস্ময়কর ইতিহাস আর নানা কিংবদন্তির ব্যাপারে কি কিছু শুনেছেন এর আগে? কোন রহস্যের পাহাড় লুকিয়ে আছে জেরুজালেমের পাহাড়ের কোলে? পবিত্র ভূমির হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি আর শত শত বিস্ময়কর নিদর্শন—কয়টার ব্যাপারে কিছুটা হলেও জানাশোনা আছে আমাদের? পবিত্র এই তিন শহরের সাথে এভাবে জড়িয়ে থাকা নানা ঘটনা আর জানা-অজানা বিস্ময়কর নিদর্শন সহ শহরগুলোর সহস্র বছরের সচিত্র ইতিহাস জানতে পড়ুন মূল্যবান এই গ্রন্থটি। 

ইসরাইলের উত্থান-পতন

প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমান সম্রাটের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বাইতুল মুকাদ্দাস, বিতাড়িত হয়েছিল ইহুদিরা। তারপর থেকে তাদের ফেরারি জীবনের সূচনা। আজ বহুকাল পর, নানাভাবে টিকে থেকে আবারো তারা দাপটের সাথে ফিরে এসেছে সেই একই পবিত্র ভূমিতে। কীভাবে? কেন হিটলার ইহুদি মেরেছিল? উসমানি খিলাফতে কেমন ছিল তারা? যায়নিস্ট প্ল্যান কী? ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা কীভাবে? কেন ফিলিস্তিনিদের সাথে এই অনন্ত রক্তপাত আর যুদ্ধ? আগামী দিনগুলোতে আমরা পবিত্র ভূমির রাজনীতিতে আর কী কী দেখতে পারি? এরকম অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব মিলবে ঠিক এই বইটিতে। ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের বিষয়ে জানাশোনা আর তার উপর নির্মিত ধারণার সাথে জড়িয়ে আছে ফিলিস্তিন তথা মধ্যপ্রাচ্য এবং সেই সূত্রে পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যত। এই বইটি আপনার সেই জানাশোনার জগতটাকে আরো অনেকখানি সমৃদ্ধ অবস্থানে নিয়ে যাবে। 


by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *