যেভাবে ডুব দেবেন নামাযের গহীনে

নামাযে দাঁড়ালেই মন ইচ্ছামতো সফরে বেরিয়ে পড়ে। এটা আমাদের জাতীয় রোগ। যে কথাগুলো ভুলে গিয়েছিলেন, সেগুলো একে একে মনে পড়তে শুরু করে যখন আপনি নামাযে দাড়াবেন। রাজ্যের কাজকর্ম আপনার দু’চোখের সামনে এসে জমা হবে নামাযে দাড়াতেই। নামাযে দাড়িয়ে ঘুম পাবে, চুল-মুখ চুলকাতে থাকবে। এগুলো আমাদের সবারই অভিজ্ঞতা। এই সবকিছুর ভিড়ে নামাযটা আর যথাযথভাবে পড়া হয়ে ওঠে না। নামাযে মন বসানো যায় না, নামাযের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া যায় না। তাই যখন আমরা শুনি সাহাবীগণ বা আউলিয়ায়ে কিরাম নামাযের মধ্যে বড় বড় ঘটনা ঘটে গেলেও বুঝতেন না—এই ব্যাপারটা তখন আমাদের কাছে এলিয়েন টাইপ কার্যকলাপ লাগে। অথচ এগুলো বাস্তব এবং এখনো এমনটা হওয়া সম্ভব, যদি আমরা নামাযকে নামাযের মত আদায় করতে পারি। আসুন, চেষ্টা করে দেখা যাক নামাযের মধ্যে মশগুল হয়ে যেতে কোনো কৌশল বের করা যায় কিনা।

নামায হলো আল্লাহর সাথে বান্দার একান্ত কথোপকথন। বান্দা আল্লাহর কাছে হিদায়াত চায়, সাহায্য চায়, তাঁর প্রশংসা করে, তাঁর কালাম তিলাওয়াত করে। নামাযের মতো স্পেশাল আর কিছুই নেই। সেই নামাযে দাঁড়িয়ে আমাদের মনোযোগ প্রায় থাকেই না বললেই চলে। কিন্তু আল্লাহ কি এরকম নামায আমাদের থেকে কবুল করবেন? আল্লাহ কিরকম নামায আমাদের থেকে চান? জবাব আমরা আল্লাহর কাছ থেকেই জেনে নেই।

“সেসকল মু’মিনরা সফল হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী।” [সূরা মু’মিনুন, আয়াত ১-২]

তার মানে আল্লাহ চান বান্দারা বিনয় ও নম্রতা সহকারে নামায আদায় করুক। কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সফল দেখতে চান ও তিনি তাদেরকেই সফল বলেছেন যারা নামাযে বিনয়ী। বিনয় ও নম্রতা সহকারে কেউ যদি নামায পড়তে চায়, তবে নামাযে মনোযোগী হবার কোনো বিকল্প নেই। আর তাই আমাদের কৌশলগুলোও হতে হবে এমন, যা আমাদের মনকে স্থির রাখবে এবং নামাযের মধ্যে সেটাকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। কী হতে পারে সেই কৌশলগুলো?

১। শুরুটা হোক আযানে

নামাযে মনোযোগ বাড়াতে হলে কাজটা শুরু করতে হবে আরো আগে থেকে। যখনই মুআযযিন আযান দেবেন, তখন থেকেই নামাযের চিন্তা মাথায় নিয়ে আসতে হবে। আযানের জবাব দেবেন, দরুদ ও দু’আ পড়বেন এবং নামাযের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন।

২। ওযুতে যত্নবান হওয়া

আযান থেকে যে প্রস্তুতির শুরু হয়েছিল, ওযুতে সেটাকে আরো জোরদার করুন। নিজেকে মনে করিয়ে দেন আপনি এখন মহামহিম আল্লাহর দরবারে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন, এর প্রভাব নিজের মধ্যে নিয়ে আসবার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার অন্তর আল্লাহ অভিমুখী হচ্ছে।

৩। প্রয়োজন মুক্ত হোন

নামাযে দাঁড়ান সব ধরনের পিছুটান মুক্ত হয়ে। শারিরীক, মানসিক কোনো প্রকার প্রয়োজন পিছনে রেখে নামাযে দাঁড়াবেন না। কেননা এরকম কোনো কারণ পেছনে থাকলে সেটা আপনাকে অস্থির করে তুলবে এবং তখন নামাযে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। যদি সব প্রয়োজন মুক্ত না-ও হওয়া যায়, তবুও চেষ্টা করতে হবে নামাযে দাঁড়িয়ে সব প্রয়োজনকে ভুলে থাকতে। নামাযে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই দুনিয়াটাকে ফেলে আসতে হবে বাইরে।

৪। কুরআনের অর্থ জানুন

নামাযে যে সূরাটিই তিলাওয়াত করুন না কেন, নামাযের আগে সেটার অর্থ জেনে নিন। বা অন্য কোনো সময়ে সূরার অর্থ দেখে নিন। এতে করে নামাযে দাঁড়িয়ে আপনি যখন সেই সূরাটিই তিলাওয়াত করবেন, তখন তার অর্থ আপনার মাথায় কাজ করবে। এটা অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করতে এবং নামাযে মনকে আকৃষ্ট করতে অত্যন্ত লাভজনক একটি পদ্ধতি।

৫। আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছেন

নামাযে দাঁড়ানোর আগেই বারবার নিজেকে রিমাইন্ডার দিতে থাকবেন যে, আমি এখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি। নামাযের আগে অন্য কোনো কাজ করবেন না। সব কাজ, সব চিন্তা থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে দাঁড়াবেন। দাঁড়িয়েও এই চিন্তাটা নিয়ে আসবেন যে আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আপনাকে দেখছেন। এই চিন্তা আপনার নামাযে মনোযোগ বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ।

৬। মনে করুন এটাই জীবনের শেষ নামায

জীবনের শেষ নামায আদায়ের সময় কেউ কি অন্য কোনো চিন্তায় মশগুল হতে পারবে? তার মাথায় কি ঘূর্ণাক্ষরেও অন্য কোনো চিন্তা আসবে? আসবে না। তাই যখনই নামাযে দাঁড়াবেন, ভাববেন এটাই হয়তো শেষ। এই অনুভূতি, এই ভয় নিয়ে দাঁড়ান। রুকু করুন, সিজদা করুন। দেখবেন আপনার মন পুরোপুরি নামাযের মধ্যেই আছে।

আমরা এখানে মাত্র ছয়টি কৌশলের কথা উল্লেখ করলাম। এগুলোই চূড়ান্ত নয়, বরং আরো অনেক কৌশল আছে নামাযে মনোযোগী হবার জন্য। তবে এখানে আমরা যে কৌশলগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম এগুলোই ইনশাআল্লাহ আপনার নামাযে মনোযোগী হবার জন্য যথেষ্ট হবার কথা। এছাড়াও নামাযে মনোযোগ আনার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন প্রচুর। আলিমদের সাহচর্য অবলম্বন করুন। তাঁদের থেকে নামায শিখুন, তাঁদের পরামর্শ নিন, কুরআন শিখুন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে নামাযে মনোযোগী হবার সৌভাগ্য দান করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকেই বিনয় ও নম্রতার সাথে পূর্ণ মনোযোগী হয়ে নামায আদায় করার তাওফিক দান করেন। আমীন।

নামাজে মনোযোগ বাড়াতে যে বইগুলো পড়তে পারেন:
নামাজে মন ফেরানো
হৃদয়জুড়ানো সালাত
হাইয়া আলাস সালাহ
নামাজ : যেমনটি তিনি চান
সালাত : আল্লাহর সাথে বান্দার মুনাজাত
মনের মতো সালাত


Posted

in

,

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *