নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন বেশ কিছু কাজ করতেন। এটা তাঁর প্রত্যহিক চর্চা ছিল। হাদীস ও ফিকহের কিতাবাদিতে এগুলো নবীজির সুন্নাহ হিসেবে এসেছে। চলুন, আজ আমরা জেনে নিই ঈদের দিন নবীজি কী কী কাজ করতেন। আমাদের কী করণীয়।
১) তাকবীর দেওয়া
ঈদের রাতে তাকবীর দেওয়া মুস্তাহাব। রমযান মাসের সর্বশেষ দিনের সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে ঈদের নামাযের ইমাম ঈদগাহে হাযির হওয়া পর্যন্ত। তাকবীরের শব্দাবলী হচ্ছে নিম্নরূপ:
অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য।
কিংবা ‘তাকবীর’ তিনবার উচ্চারণ করে এভাবেও বলতে পারেন:
অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য।
আলিমদের মতে সবগুলোই জায়েয। হাটেবাজারে, মসজিদে-নামাযের স্থানে ও বাড়ীঘরে এ যিকির উচ্চস্বরে পড়বেন পুরুষরা। তবে নারীরা তাকবীর দেওয়ার সময় তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করবেন না।
২) বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া
ঈদের নামাযের উদ্দেশ্য বের হওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেয়ে বের হবেন। কারণ, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ভোরে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেয়ে তারপর বের হতেন।
৩) সবচেয়ে ভালো পোশাক পরা
নিজের সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পোশাক পরবেন। এটি পুরুষদের জন্য। নারীরা ঈদগাহে যাওয়ার সময় সুন্দর পোশাক পরে বের হবেন না। কারণ, নবীজি (সা.) বলেছেন: (وليخرجن تَفِلات) অর্থাৎ তারা সাধারণ পোশাকে বের হবে; আকৃষ্টকারী কোনো পোশাকে নয়। নারীদের জন্য বেপর্দায়, সুগন্ধি মেখে ও আকৃষ্টকারী হয়ে বের হওয়া হারাম।
৪) গোসল করে নেওয়া
কোনো কোনো আলেম ঈদের নামাযের জন্য গোসল করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। এর কারণ হলো, সোনালী যুগের পূর্বসূরিদের অনেকেই এটি করতেন। ঈদের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব; যেমনিভাবে জুমার নামাযে যাবার আগে গোসল করার বিধান এসেছে। যদি কেউ গোসল করেন তাহলে সেটা ভালো।
৫) ঈদের নামায আদায় করা
ঈদের নামায আদায় করা। ঈদের নামায আদায় করা শরিয়তের বিধান মর্মে সকল মুসলমান ইজমা (একমত পোষণ) করেছেন। ঈদের নামাযের সুন্নাহ হচ্ছে, ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা ‘আ’লা’ পড়বেন, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘গাশিয়া’ পড়বেন কিংবা প্রথম রাকাতে সূরা ‘ক্বফ’ পড়বেন, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘ক্বমার’ পড়বেন। উভয় পদ্ধতির পক্ষে নবীজি (সা.) থেকে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে।
৬) অতিরিক্ত কিছু না করা
অনেক আলেমের মতে, কেউ যদি ইমামের আগে ঈদগাহে উপস্থিত হয় তাহলে সে বসে পড়বে; দুই রাকাত নামায পড়বে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দুই রাকাত নামায পড়েছেন; এর আগে বা পরে কোনো নামায পড়েননি। তবে আলিমদের মতে কেউ চাইলে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ (বা মসজিদে প্রবেশের) নামায পড়ে বসতে পারে। কেউ কাউকে বাধা দিবো না।
৭) ফিতরা আদায় করা
ঈদুল ফিতরের বিধানাবলীর মধ্যে রয়েছে যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) ফরয হওয়া। নবী (সা.) ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা পরিশোধ করা জায়েয। ইমাম বুখারী সংকলন করেছেন: ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন, “তারা (সাহাবায়ে কেরাম) ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে দিয়ে দিতেন”। যদি কেউ ঈদের নামাযের পরে পরিশোধ করে তাহলে সেটা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে আদায় হবে না। যেহেতু ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি নামাযের আগে আদায় করেছে সেটা ‘মকবুল ফিতরা’। আর যে ব্যক্তি নামাযের পরে আদায় করেছে সেটি (সাধারণ) সদকাসমূহের মধ্যে থেকে একটি সদকা।”
৮) একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো
একে অপরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা। পুরুষেরা পরস্পর যে কোলাকুলি করতে পারে, এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শরিয়ত গর্হিত কাজ অনেক মানুষের পক্ষ থেকে ঘটে থাকে। যেমন মহিলাদের বেপর্দা অবস্থায় পর পুরুষদের সামনে উপস্থিত হওয়া, পাড়ায় মহল্লায় গান বাজনা বাজানো, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯) কবর যিয়ারত জরুরী নয়
আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষের ঈদের দিন কবর যিয়ারত করা ও কবরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর অভ্যাস রয়েছে। কবরবাসীদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর কিছু নেই। তারা তো রোযাও রাখেনি, নামাযও পড়েনি।
আলিমদের মতে, কবর যিয়ারত ঈদের দিন বা জুমার দিন বা অন্য কোনো দিনের সাথে খাস কিছু নয়। কবর যিয়ারত একটি ইবাদত। কোনো ইবাদত শরিয়ত মোতাবেক না হলে শরিয়তে সেটা অনুমোদনহীন। নবী (সা.) কবর যিয়ারতের জন্য ঈদের দিনকে সুনির্দিষ্ট করেননি। সুতরাং কবর যিয়ারতের জন্য ঈদের দিনকে নির্দিষ্ট করা উচিত নয়।
১০) ঈদের নামায শেষে ভিন্ন পথ দিয়ে যাওয়া
ঈদের নামাযের জন্য এক রাস্তা দিয়ে বের হলে রাসূল (সা.)-এর অনুসরণে অপর রাস্তা দিয়ে ফেরত আসার শরয়ি বিধান রয়েছে। এটি ঈদের নামায ব্যতীত অন্য কোনো নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুন্নত নয়; জুমার নামাযের ক্ষেত্রেও নয়; অন্য কোনো নামাযের ক্ষেত্রেও নয়। বরং এটি ঈদের নামাযের সাথে সুনির্দিষ্ট।
[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১৬/২১৬-২২৩) সংক্ষেপে সংকলিত]
Leave a Reply