শীত, গ্রীষ্ম, বসন্ত, সবই আল্লাহর দান। প্রকৃতিকে আল্লাহ্ তাআলা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বেঁধে রেখেছেন। ফলে সবকিছু যথাযথ আবর্তিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সূরা নূর, ২৪: ৪৪)।
সামনেই আসছে শীতকাল। মুমিনের বসন্ত। সাহাবীরা এই সময়টাকে ইবাদতের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিতেন। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন: ‘গ্রীষ্মের গনিমত হলো, শীতকালে সাওম রাখা।'[১]
শীত এলেই তিনি বলতেন: ‘শীত, তোমায় স্বাগত! এখনই তো সময় বরকত বর্ষণের! তাহাজ্জুদ-গুজারদের জন্য রাত হবে এখন দীর্ঘ এবং রোজাদারদের জন্য দিন হবে সংক্ষিপ্ত।'[২]
ইমাম ইবনু রজব হাম্বলী (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন, ‘শীত মুমিনের বসন্ত। কারণ, এই সময়টা জুড়ে মুমিন আমলের বাগান চরে বেড়ায়, ইবাদতের মাঠে দ্রুত গতিতে ছুটে চলে এবং মনকে নেক আমলে ব্যস্ত রাখতে পারে খুব সহজেই।'[৩]
শীত এলে উবাইদ ইবনু উমাইর (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন, ‘ওহে কুরআন-প্রেমীরা! রাতটা তিলাওয়াতের জন্য লম্বা করে দেয়া হয়েছে। কাজেই বেশি করে তিলাওয়াত করো। আর দিনকে রোজার জন্য ছোট করে দেয়া হয়েছে। কাজেই বেশি করে রোজা রাখো।'[৪]
শীতকালে আমাদের পূর্বসূরিগণ প্রচুর আমল বাড়িয়ে দিতেন। কি দিনের, কি রাতের। শীতকালে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ওযু করলে আলাদা ফজিলত আছে। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাবো, যা করলে আল্লাহ গুনাহখাতা ক্ষমা করে দেবেন এবং (বান্দার) মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন?’ লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ্র রাসূল, বলুন।’ তিনি বললেন: ‘কষ্টকর অবস্থায়ও পরিপূর্ণ ওযু করা, নামাজের জন্য মসজিদে বারবার যাওয়া এবং এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হলো সীমান্ত প্রহরা।'[৫]
সাহাবী উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর ছেলেকে উদ্দেশ করে বলতেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।’
আমাদের পূর্বসূরিরা শীতের রাতে তাহাজ্জুদও বাড়িয়ে দিতেন। যেমন, আবূ হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি রাতকে তিনভাগে ভাগ করে নিতেন। এক ভাগ রাখতেন তাহাজ্জুদের জন্য, এক ভাগ ঘুমের জন্য, আরেক ভাগ ইলমের দ্বীন শেখার জন্য। তিনি বলতেন, ‘আমি রাতকে তিন ভাগে ভাগ করে নিই। প্রথম ভাগে নামাজ পড়ি, দ্বিতীয় ভাগে ঘুমাই এবং শেষভাগে আমি নবীজির হাদীসগুলো স্মরণ করি।'[৬] একই কাজ আমরূ ইবনু দীনার এবং সুফিয়ান আস-সাওরীর মতো জ্ঞানের দিকপাল মনীষীরাও করতেন।
শীতকালকে সামনে রেখে আমরা একটি রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারি। যেমন:
১) দিনের বেলা নফল রোজা রাখব।
বেশি রোজা রাখতে চাইলে দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে, দাউদ (আলাইহিস সালাম) একদিন বিরতি দিয়ে রোজা রাখতেন। এছাড়া রোজা সংক্রান্ত গাইডলাইন, অনুপ্রেরণা পেতে নিচের বইগুলো:
(১) ধূলিমলিন উপহার রামাদান
লেখক : শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
প্রকাশনী : সীরাত পাবলিকেশন
(২) প্রোডাক্টিভ রামাদান
লেখক : উস্তাদ আলী হাম্মুদা, মোহাম্মাদ ফারিস
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
(৩) রামাদ্বান প্ল্যানার
লেখক : শায়খ আহমাদুল্লাহ
প্রকাশনী : আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পাবলিকেশন্স
২) দিনে নফল সালাত বাড়িয়ে দেয়া
দিনের বেলা আরও যে কাজগুলো করতে পারি: বেশি বেশি নফল সালাত পড়া। নামাজের হারানো স্বাদ ফিরে পাবার এটাই মোক্ষম সময়। আমাদের ভাঙ্গাচুরা নামাজটা আমরা এই শীতে ঠিক করে ফেলতে পারি। এ ক্ষেত্রে যে বইগুলো আপনার কাজকে সহজ করবে:
(১) মনের মতো সালাত
লেখক : ড. খালিদ আবু শাদি
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
(২) আমার সালাত ছুটে গেল!
লেখক : ইসলাম জামাল
প্রকাশনী : রুহামা পাবলিকেশন
(৩) কীভাবে নামাজের মধুরতা লাভ করা যায়
লেখক : মিশারী আল-খারাজ
প্রকাশনী : Bookish Publisher
৩) রাতে তাহাজ্জুদ অভ্যাস করা
আর অবশ্যই রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করা। প্রথম দিনেই বেশি না পড়ে অল্প অল্প করে রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন। দুই রাকাত দিয়েই শুরু করুন। এছাড়া তাহাজ্জুদ বিষয়ক এই বইগুলোও পড়তে পারেন:
(১) তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল
লেখক : ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া
প্রকাশনী : দারুল আরকাম
(২) রাতের আধাঁরে প্রভুর সান্নিধ্যে
লেখক : সাঈদ ইবনে আলী আল কাহতানী
প্রকাশনী : আয়ান প্রকাশন
(৩) কিয়ামুল লাইল
লেখক : শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল
প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন
৪) রাতে কুরআন তিলাওয়াত বাড়িয়ে দিন।
রাতে কুরআন তিলাওয়াত বাড়িয়ে দিন। কুরআন পড়ার আনন্দ বাড়াতে নিচে বইগুলোর সংগ্রহে রাখতে পারেন:
(১) কুরআন বোঝার মজা
লেখক : আবদুল্লাহ আল মাসউদ
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
(২) ৩০ মজলিসে কুরআনের সারনির্যাস
লেখক : মুফতি জিয়াউর রহমান
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
(৩) একটি মজার তাফসীর বলি
লেখক : মাসউদ আলিমী
প্রকাশনী : সীরাত পাবলিকেশন
(৪) কুরআন-প্রেমে ব্যাকুল হৃদয়
লেখক : আমর আশ-শারকাবি
প্রকাশনী : রুহামা পাবলিকেশন
(৫) পড়ো ২
লেখক : ওমর আল জাবির
প্রকাশনী : সমকালীন প্রকাশন
এছাড়া কিছু অল্প আমল করে বেশি সাওয়াব পেতে এবং গুনাহ মাফের আমলগুলো বেশি বেশি করতে নিচের বইগুলোও সংগ্রহ করতে পারেন:
(১) গুনাহ মাফের আমল
লেখক : ড. সায়্যিদ বিন হুসাইন আফফানী
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
(২) জান্নাত লাভের ১৭০ আমল
লেখক : মো: নুরুল ইসলাম (নয়ন)
প্রকাশনী : আলোকিত প্রকাশনী
(৩) নবীজির দিন-রাতের আমল
লেখক : ইমাম ইবনুস সুন্নী (রহ.)
প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
[১] তিরমিযী (৭৯৭); আহমাদ (১৮৯৭৯) মুরসাল হাদীস
[২] লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃঃ ৫৫৮; মিযানুল ইতিদাল, যাহাবী (৪/২৭০)
[৩] লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃঃ ৩২৬
[৪] লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃঃ ৫৫৮
[৫] সহীহ মুসলিম (২৫১)
[৬] তাবাকাতুশ শাফিয়ীন, ইমাম ইবনু কাসীর (খণ্ড ১, পৃঃ ২৬৯)
Leave a Reply