শয়তান মানুষকে সাতটি ফাঁদে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। এর একটি অপরটির চেয়ে কঠিন এবং সর্বদা অপেক্ষাকৃত কঠিন ফাঁদটিকে সে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
প্রথম: কুফরের ফাঁদ
একজন মুমিন যখন কুফরে ফিরে যায়, শিরক করে, তখন তার সব আমল বরবাদ যায়। এজন্য শয়তান মানুষকে সর্বপ্রথম কুফরের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এটাই তার প্রধান লক্ষ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজ্ঞ এবং দুর্বল ঈমানের মুসলিমরা এই ফাঁদে পড়ে। তাই সবসময় নিজের ঈমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা চাই।
দ্বিতীয়: বিদআতের ফাঁদ
কাউকে যখন কুফরের ফাঁদে ফেলতে পারে না, তখন শয়তান বিদআতের ফাঁদ ফেলে। বিদআত হচ্ছে ঐসব কাজ, যা মানুষ আমল ভেবে করে, অথচ ইসলামে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। যারা বিদআতে লিপ্ত, তাদের ভিতর অপরাধবোধ কাজ করে না। ফলে তাওবাও করে না। এজন্য এটি শয়তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফাঁদ।
তৃতীয়: কবিরা গুনাহসমূহের ফাঁদ
কুফর এবং বিদআতের ফাঁদ ব্যর্থ হলে শয়তান তৃতীয় ছক আঁকে। আর তা হলো কবিরা গুনাহের ফাঁদ। ‘ভবিষ্যতে তাওবাহ করে নিও’, ‘আল্লাহ্ দয়াশীল, ক্ষমাশীল’ ইত্যাদি অজুহাতে মানুষকে কবিরা গুনাহে জড়ায়।
চতুর্থ: সগিরা গুনাহসমূহের ফাঁদ
মুমিনদের ভিতর কবিরা গুনাহের ব্যাপারে সর্তক থাকে, কিন্তু সগিরা গুনাহের ব্যাপারে বেখেয়ালি, শয়তান তাদেরকে এই ফাঁদে ফেলে। আর একজন মানুষকে যখন সগিরা গুনাহে অভ্যস্ত করে ফেলা যায়, তখন তাকে কবিরা গুনহের ফাঁদেও ফেলা সময়ের ব্যাপার।
পঞ্চম: মুবাহের ফাঁদ
ওপরের সবগুলো ব্যর্থ হলে শয়তান মুবাহের ফাঁদে ফেলে। মুবাহ মানে যেসব কাজ ইসলামে বৈধ। মানুষ সেগুলো বৈধ ভেবে অতিরিক্ত করে ফেলে। এভাবে সীমা অতিক্রম করার দ্বারা ধীরে ধীরে গুনাহের দিকে ধাবিত হয়, আখিরাত ভুলে যায় কিংবা অন্যের হক নষ্ট করে ফেলে। যেমন পর্যাপ্ত অর্থ সম্পদ থাকার পরেও সম্পদের পেছনে দিন রাত সময় নষ্ট করা, হালাল খাবার অতিরিক্ত ভোগ করে দেহের ক্ষতি ডেকে আনা, সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে পরিবারের হক নষ্ট করা, ইত্যাদি।
ষষ্ঠ: অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদাপূর্ণ আমলের ফাঁদ
বর্তমানে এই ফাঁদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন উৎসব, আনুষ্ঠানিকতাকে কেন্দ্র করে মানুষদের এই ফাঁদে বেশি পড়তে দেখা যায়। যেমন রাতভর সালাত আদায় করে ফজর কাযা করা, দাড়ির চাইতে পাঞ্জাবী জুব্বা নিয়ে টানাটানি করা, এভাবে নফল সালাত, সাওম সহ বিভিন্ন আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করা।
সপ্তম: মানুষের ওপর শয়তানের বাহিনী প্রয়োগের ফাঁদ
মানুষের ওপর শয়তানের বাহিনী প্রয়োগের ফাঁদ—যারা মানুষকে হাতে ও জবানে নানা প্রকার কষ্ট দিয়ে থাকে। ব্যক্তি যত ইবাদতগুজার, তার প্রতি শয়তানবাহিনীর অত্যাচারও তত বেশি। এটা শয়তানের সর্বশেষ ফাঁদ। সে এবার নিজেই ইবাদতগুজার বান্দার ক্ষতি করতে লেগে যায়। জীনদের লেলিয়ে দেয় এবং মানুষরূপী শয়তানদেরকেও এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।
এভাবে আল্লাহর পথের পথিকদের কী কী স্তর অতিক্রম করতে হয় এবং কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হয়, ইত্যাদি জানতে পড়ুন:
বই: মাদারিজুস সালিকীন (আল্লাহর পানে যাত্রা)
লেখক: আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ
ওয়াফি পাবলিকেশন
Leave a Reply