আব্দুল্লাহ ইবনু উমর ছিলেন উমার ফারূক (রাযি.)-এর ছেলে। দুজনই রাসূল (ﷺ)-এর প্রিয় সাহাবী। দ্বীন পালনে দুজনই বেশ অগ্রগামী ছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.)-এর একটি স্বভাব ছিল, তিনি প্রিয় নবীর একটি কাজও বাদ দিতেন না। সেটা সুন্নাহ হোক আর সাধারণ কাজ হোক, নবীজিকে কিছু করতে দেখলেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন করার জন্য। এত গভীর ভালোবাসা ছিল প্রিয় নবীর প্রতি! যুবক সাহাবীদের ভিতর আব্দুল্লাহর সুন্নতের প্রতি পাবন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো।
একবার নবীজি চাইলেন তাকে কিছু উপদেশ দেবেন। এমন একটি উপদেশ, যা তার সারা জীবনের জন্য যথেষ্ট হবে। নবীজি তার কাঁধে হাত রাখলেন। যেন বাবা তার আদরের সন্তানকে কিছু বলতে চান। না জানি কেমন অনুভূতি হয়েছিল আব্দুল্লাহর! একবার ভাবুন তো, প্রিয় নবী আপনার কাঁধে হাত রেখেছেন, কেমন লাগবে আপনার? এ থেকে বোঝা যায় কতটা দরদী ছিলেন তিনি! উপদেশ দেবার আগে পরিবেশ তৈরি করে নিতেন। মানুষের গভীরে পৌঁছে নিতেন। যাইহোক, কাঁধে হাত রেখে নবীজি এরপর বললেন:
‘দুনিয়াতে এমনভাবে বসবাস করো, যেন তুমি একজন অপরিচিত কিংবা পথচারী, মুসাফির। নিজেকে সবসময় কবরবাসীদের দলভুক্ত মনে করবে।’ পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ এই কথাটি আজীবন মনে রেখেছিলেন।
অনেক বছর পরের কথা। নবীজি তখন বেঁচে নেই। জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে আব্দুল্লাহ নিজেও এখন বৃদ্ধ প্রায়। তাবিয়িদের ভিতর মুজাহিদ (রহ.) ছিলেন তাঁর ছাত্র। তাফসীরের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অগাধ। হয়ত মুজাহিদের মাঝে নিজেকে দেখতে পেয়েছিলেন আব্দুল্লাহ। তাই নবীজির সেই উপদেশের কথা স্মরণ করে তাকেও কিছু উপদেশ দিতে চাইলেন। বললেন:
‘মুজাহিদ, সকাল পেলে সন্ধ্যার আশা করো না। সন্ধ্যা পেলে সকালের আশা করো না। যতটুকুই আয়ু পাবে, এ থেকে পাথেয় সংগ্রহ করো মৃত্যুর জন্য। অসুস্থতা আসার আগেই সুস্থতাকে মূল্যায়ন করবে। কারণ, আল্লাহর বান্দার, তুমি জানো না আগামীকাল তোমাকে কী নামে ডাকা হবে! (জীবিত না মৃত)’
এটাকেই বলে যুহদ। দুনিয়াবিমুখতা। দুনিয়াতে থেকেও দুনিয়াবিমুখ হবার আদর্শ তরিকা। এ বিষয়ে নবীজির হাদীস অসংখ্য, যা আমরা অনেকেই জানি না। তাই দুনিয়াবিমুখতা বিষয়ক বইগুলো নিয়ে আমরা একটি ক্যাটাগরি বানিয়েছি। এ বিষয়ে চমৎকার চমৎকার বইগুলো এখানে পাবেন। বইগুলো আমাদের অনুপ্রাণিত করবে দ্বীনমুখী হতে। দুনিয়ার হালাল অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে মনোবল জোগাবে এবং হতাশা, আফসোস-মুক্ত একটি জীবন উপহার দেবে।
যুহদ: দুনিয়াতে থেকেও দুনিয়াবিমুখ হবার নববি পদ্ধতি
by
Tags:
Leave a Reply