আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বছরের ভিতর দশটি রাত রেখেছেন, যা অন্য সকল রাত হতে সেরা। তেমনি দশটি দিন রেখেছেন, যা অন্য সকল দিন হতে সেরা। এই রাত-দিনের আমলও অন্য কোনো দিন রাতের আমলের মতো নয়। এ সময় করা প্রতিটি আমল আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। সেই দশটি সেরা রাত হচ্ছে রমাদানের শেষ দশ রাত। আর সেরা দিনগুলো হচ্ছে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। কাজেই যে এই দিন এবং রাতে আমল করতে পারলো, সে সত্যিই ভাগ্যবান।
আসুন জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে করণীয় কিছু আমল জেনে নিই:
(১) ফরজ ও নফল সালাতে মনোযোগী হওয়া
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরজ ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নিই। আমি তখন তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দিই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তাকে কষ্ট দিতে অপছন্দ করি।’ [সহীহ বুখারী (৬৫০২)]
(২) তাওবাহ ইস্তিগফার বাড়িয়ে দেয়া
আমাদের সবার দ্বারা সারাবছর পাপ হয়। পাপ করি না এমন মানুষ মেলা ভার। তাই আল্লাহ তাআলা গুনাহ মাফের অনেকগুলো উপায় রেখেছেন। দুআ কবুলের জন্য বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত রেখেছেন, যখন বান্দা দুআ করলে তিনি কবুল করেন। ইমাম ইবনুল-কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘এই মুহূর্তগুলো ছয়টি: রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, আযানের সময়, আযান এবং ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, ফরজ সালাতের পর, জুমার দিন মিম্বারে ইমাম উঠার সময় থেকে নিয়ে সালাত শুরু আগ পর্যন্ত, এবং সর্বশেষ হচ্ছে জুমার দিন আসরে সালাতের পর।’ [আত্মার ওষুধ, ইমাম ইবনুল-কাইয়্যিম]
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে এই মুহূর্তগুলো আমাদের কাজে লাগানো উচিত। অতীতের সব গুনাহ থেকে মাফ চেয়ে নেবার এটাই মোক্ষম সুযোগ।
(৩) নফল সাওম পালন করা
হাফসা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (ﷺ) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেন নি। সেগুলো হলো: আশুরার সাওম, জিলহজ্জের দশ দিনের সাওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সাওম, ও ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।’ [মুসনাদে আহমাদ (৬/২৮৭), আবু দাউদ (২১০৬)]
(৪) হজ্জ ও উমরা আদায় করা
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ্জ করেছে এবং তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি, কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে গেল, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে।’ [বুখারী (১৪৪৯), মুসলিম (১৩৫০)]
(৫) যিকির-আযকার করা
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ করা সুন্নাহ। তাকবীর হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার’, তাহলীল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তাহমীদ ‘আলহামদুলিল্লাহ’। এই যিকিরগুলো পুরুষরা মসজিদে, ঘরে-বাহিরে আওয়াজ করে পড়বে। আর নারীগণ নিম্ন-স্বরে।
নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘এই দশদিনের আমলের চাইতে অন্য কোনো দিনের আমল আল্লাহর নিকট এত দামী এবং প্রিয় বলে গণ্য হয় না। কাজেই এই দিনগুলোতে বেশি বেশি তাহলীল, তাকবীর এবং তাহমীদ করো।’ [মুসনাদে আহমাদ (৭/২২৪) আহমাদ শাকির]
(৬) কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত শুধু এই দিনগুলোতেই নয়, সারা বৎসর ব্যাপী থাকে। তবে এই দিনগুলোতে এর সাওয়াব কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কাজেই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন।
আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি হরফ পাঠ করে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়। আমি বলছি না ‘আলি-লাম-মীম’ একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ [তারগীব ওয়া তারহীব (২/২৯৬)]
(৭) আরাফার দিন সাওম পালন করা
আরাফার দিন, অর্থাৎ যেদিন হাজিগণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন, সেদিন অন্যদের জন্য সাওম পালন করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
আবু কাতাদাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (ﷺ)-কে আরাফার দিন সাওম রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এই সিয়াম পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছররে গুনাহর কাফফারা হবে।’ [সহীহ মুসলিম (১১৬৩)]
(৮) দশম দিনের আমল
জিলহজ্জ মাসের দশম দিনকে শ্রেষ্ঠ হজ্জের দিন বলা হয়। এ দিন হাজিগণ তাদের কুরবানির পশু যবেহ করে তাদের হজ্জ পূর্ণ করেন।
ইবনে উমার (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (ﷺ) কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন। সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা কুরবানির দিন। নবীজি বললেন, এটা হলো শ্রেষ্ঠ হজ্জের দিন।’ [আবু দাউদ (১৯৪৫), সহীহ: আলবানী (রহ.)]
(৯) কুরবানির দিন
আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত (রাযি.) হতে বর্ণিত, নবীজি (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।’ [আবু দাউদ (১৭৬৫)]
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুক।
Leave a Reply