আল্লার রাসূল (ﷺ) বলেন,
إنَّ الله لا ينظر إلى صوركم، ولا إلى أموالكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের বাহ্যিক অবয়বের দিকে তাকান না। তোমাদের সম্পদের দিকেও না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর এবং আমল দেখেন।’ [সহীহ মুসলিম, ৬৭০৮]
.
এর ব্যাখ্যায় শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন,
‘কিছু মানুষ এই বিষয়কে সামনে রেখে বলে, “অন্তর দিয়ে বিচার করুন। আমল দিয়ে নয়।” যখন তাকে নসিহত করা হয়, “আল্লাহকে ভয় করো”, তখন সে বলে, “আমার ঈমান অন্তরে।” বিশেষ করে কোনো পাপ সংঘটিত হলে, যেমন: সালাতের ব্যাপারে অলসতা, যাকাত দিতে কার্পণ্য করা, খারাপ আচরণ, টাখনুর নিচে কাপড় পড়া, নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা, কিংবা এ জাতীয় যা কিছু আছে; ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে উপদেশ দেয়া হলে কেউ কেউ এরূপ মন্তব্য করে, “আমার ঈমান অন্তরে।”
.
এগুলো শয়তানের যুক্তি বৈ কিছু নয়। নিশ্চয় অন্তরই মূল। আর অন্তর যখন ঠিক থাকে, তখন আমলও ঠিক থাকে। যেমনটা ওপরের হাদীসে আমরা পড়লাম। আসলে অন্তরের ঈমান যদি ঠিক থাকত, তাহলে সে তোমাকে পাপ থেকে বিরত রাখত। কিন্তু না, সে দুর্বল অথবা অনুপস্থিত। এ জন্য আরেক হাদীসে এসেছে:
في القلب مُضْغَةٌ، إذا صلحت صلح الجسدُ كلُّه
‘অন্তরে একটি মাংস পিণ্ড আছে। এটি ঠিক হলে গোটা শরীর ঠিক হয়।’
.
কীভাবে? নেক আমলের দ্বারা। অন্তর ঠিক হলে দেহও ঠিক হবে। আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ধাবিত হবে এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকবে। এটাই হাদীসের ‘সঠিক হওয়া’ বাক্যের অর্থ। কাজেই দেহ সঠিক পথে ধাবিত না হলে বুঝতে হবে অন্তর ঠিক নেই। এর ভিতরের ঈমানটি চলে গেছে, অথবা রোগাক্রান্ত হয়েছে। ফলে সে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
.
ঈমান বাড়ে এবং কমে। আর তা হয় কথা এবং আমলের মাধ্যমে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদাহ। আল্লাহ বলেছেন, وَقُلِ اعْمَلُو ‘এবং বলো, তোমরা আমল করো।'[সূরা তাওবাহ, ১০৫] অন্যত্র বলেছেন, ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ‘তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ [সূরা নাহল, ৩২]
.
তিনি কিন্তু এরূপ বলেন নি, তোমাদের ঈমানের ফলে প্রবেশ করো। বলেছেন, ‘তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ কাজেই ঈমান হলো কথা এবং আমলের সমষ্টি। আমল বলতে বোঝায় সালাত, যাকাত, এরকম আরও যত আমল আছে। এছাড়া আল্লাহর ফরজকৃত বিষয়গুলো ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রূপ হারাম থেকে বেঁচে থাকাও ঈমান।
.
বান্দার ওপর ওয়াজিব সে আল্লাহকে ভয় করবে। তার ক্ষতি ডেকে আনে, আল্লাহকে রাগান্বিত করে—এমন বিষয় থেকে সাবধান থাকবে। অতএব তোমার অন্তরের ঈমান যখন শুদ্ধ হবে, তখন সে তোমাকে ফরজ আদায়ের দিকে ধাবিত করবে এবং হারাম থেকে বিরত রাখবে। আর তোমার মধ্যে যখন ওয়াজিব বিষয়ে কমতি দেখে যাবে, কিংবা কোনো হারাম কাজ প্রকাশ পাবে, তখন এটাই প্রমাণ তোমার ঈমান দুর্বল। এই দুর্বলতা যত বৃদ্ধি পাবে ক্ষতির পরিমাণ ততই বড় হবে। হয়ত-বা ঈমান একেবারেই নিভে যাবে একটা সময়।
.
পাপের বিষয়টিও এমন। যখন পাপ বেড়ে যায়, তখন অন্তর দুর্বল হয়ে পড়ে। সাথে ঈমানেও ভাটা পড়ে। আর এভাবে চলতে থাকলে একসময় ব্যক্তি ইসলাম বিধ্বংসী বিষয়ের সাথে জড়িয়ে যায়। ফলে তার ঈমান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অসুস্থতা যেমন মৃত্যুর দূত, তেমনিভাবে পাপ কুফরের দূত।
.
অতএব প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ওয়াজিব সে আল্লাহকে ভয় করবে, শয়তান এবং নিজ প্রবৃত্তির ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। সেই সাথে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকবে এবং সাবধানতা অবলম্বন করবে। আর আল্লাহর ওয়াজিবকৃত বিষয়গুলো পালনে সচেষ্ট হবে। এটাই অন্তরের শুদ্ধতার প্রমাণ।’
————-
সূত্র: https://bit.ly/3ea1It8
Leave a Reply